এম.এইচ.মাহিন:
মাদ্রাসার সাথেই প্রধান সড়ক, তাই মাদ্রাসার গ্রিলের ফাঁকে চোখ রাখে মাসুদের ঘরমুখী মানুষের উপর। মানুষের আসা- যাওয়া দেখে মাসুদের অভিমান আমি কেন পড়ে আছি এতিমখানার বন্দীশালায় ।আমার কি ভিটা-বাড়ি, আপনজন নেই। ছোটবেলা বাবা-মা হারানো মাসুদ এক আত্নীয়ের হাত ধরে এ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। মাসুদের সহপাঠীরা সবাই বাড়ি ফিরে, পড়ে থাকে অবহেলিত মাসুদ স্বীয় মাদ্রাসায় । এখন মাসুদ বুঝতে পারে যে তার বাবা –মা বেঁচে নাই। মাসুদের সহপাঠীরা মুঠোফোনে অভিমান করে সামনে ঈদ ,আমাকে এটা-ওটা কিনে দিতে হবে। মাসুদ সহপাঠীদের কথা নীরবে হজম করে আর দীঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বলে কতদিন হয় আমি অভিমান করে কাঁদি না, অভিমান করবইবা কার সনে আমারতো মাতাপিতা বেঁচে নেই। ঈদের জন্য যখন সহপাঠীরা বাড়ি যায় তখন মাসুদের দু:খের মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যায়।
মাসুদও প্রস্তুতি নেয় আপন মনে পুরানো একটা ছেড়া প্যান্ট সেলাই করছে ঈদের জন্য।সেলাই করতে যেয়ে সুই এর মাথা বিধেঁ যায় মাসুদের আঙুলে । এ আঘাত মাসুদের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয় আরও একধাপ। রহমত, মাগাফরাত ও নাজাতের পবিত্র মাস রমজানকে বিদায় জানাতে না জানাতে ।ঈদুল ফিতরের বাঁকা চাঁদ দেখা দিল আকাশে। মাসুদ ভোরবেলা হুজুরদের সাথে কবর যিয়ারত করতে যায় । অভিভাবক বলতে মাদ্রাসার সকল সদস্যরাই । মাসুদ মাদ্রাসার প্রধান হুজুরকেবলাকে কদমবুচি করলে সদ্য ২টা দশ টাকার নতুন নোট গুঁজে দেয় বকশিশ হিসেবে মাসুদের হাতে।
বকশিশ দেওয়া টাকাটা হুজুরকেরলার না এ সমাজের এক বিত্তবানের দেওয়া যাকাতের টাকা। ঈদের ছুটি শেষে সহপাঠীরা ফিরছে বিদ্যা মনোনিবেশে । সবার পড়নে ঈদের নতুন পোষাক , মাসুদ পুরানো পোষাকে। সহপাঠীরা বলাবলি করছে আমি ঈদে ছালাম দিয়ে এত টাকা পাইছি । এক্ষেত্রে মাসুদ তার পাওয়া ২টা নতুন নোট বের করে আনন্দ শেয়ার করে। এই আনন্দকে পুঁজি করে মাসুদের বেঁচে থাকা । আসুন আপনার, আমার হাতের নাগালে এরুপ কত মাসুদ রয়েছে , মানবতার দৃস্টিকোণ থেকে তাদের একটু খোঁজ-খবর রাখি।