বাজারে প্রতিমার ঘর ঘেঁষে মাহেন্দ্র শীলের দোকান ঘর। দোকানটির চারপাশ ছিল বাংলা ছায়া-ছবির পোস্টারে পরিপূর্ণ। দোকানে বসার মত ছিল কয়েকটি পাতানো পিঁড়ি। মাহেন্দ্র শীলের দোকান পিঁড়িতে আমি নিজেও বসেছিলাম। মাহেন্দ্র জাতে হিন্দু।তার বসতি নিবাস চাঁদপুর জেলার কানু-দাশদী। বংশ তার শীল। পেশা তার নরসুন্দর। সহজ করে বললে নাপিত। মাহেন্দ্র শীলের কর্ম দোকান ঘর পর্যন্ত্ম সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রতি সপ্তাহ খেপ মারতেন বিভিন্ন হাট বাজারে। দু’পয়সা বেশি আয় হয়ত মহিশমাড়ির হাঁটে।
আমরা ছোটবেলা হতে দেখে আসছি মাহেন্দ্র শীল আমাদের মহকুমায় বেশ পরিচিত লোক। ্অজ পাঁড়ায় গাঁয় এমন কোন বংশ নেই যেখানে মাহেন্দ্র শীলের পরিবার প্রবেশ করেনি। একটা মজার বিষয় তাকে কেউ খেউরি বাবদ নগদ অর্থ কড়ি না দিতে না পারলেও গৃহস্থলি পন্য দ্বারা তার ঋন শোধ করা যেত।
তার কাজের কৌশল ছিল মক্কেলের মাথাটা দু’হাটুর মধ্যখানে প্রবেশ করিয়ে স্বভাব সূলভ কাজ করা। মাহেন্দ্র শীলের কাজের হাতিয়ার ছিল সনাতন আমলের একটা ÿুর, কেচি, দাঁত ভাঙ্গা কয়েকটি চিরম্ননি, সোডা, ৫৭০ লন্ড্রী সাবান এবং কাঁঠাল কাঠের কয়েকটি পিঁড়ি। পাঁড়ায় আসলে গৃহস্থলি পন্য আর দোকান ঘরে গেলে খেউরি বাবদ মাহেন্দ্র শীল তেমন একটা বেশি নিতেন না টাকা পাঁচেক। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে অস্থায়ী ভাবে বিভিন্ন হাট-বাজারে পিঁড়িতে বসে খেউরি করা।
মাহেন্দ্র শীল নেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার পথটা আগলে রেখেছেন তারই পু্েরএর ছাওয়াল নির্মল শীল। নির্মল শীল ডিজিটাল যুগের পোলা,তবে দাদার পেশাকে অনুসরন করলেও ব্যবহার করেন না দাদার মতো সনাতন যুগের হাতিয়ার। নাতির দোকানে নেই দাদার দোকান ঘরের মতো বাংলা ছায়া-ছবির পোস্টার। নাতির দোকান আধুনিক সাজে সজ্জিত। সাঁজের বেলা বিপনিতে জ্বলে উঠে কৃএিম আলো এবং মাথার উপর ঘুরে তিনহাতার পাখা। কাজের হাতিয়ার সম্পূর্ণ আধুনিক। খেউরি বাবদ নেন মোটা অংকের টাকা ।
লেখক:
এম.এইচ.মাহিন