মতলব উত্তর : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাড়ে ৪ হাজার জেলে পরিবারে এখন দুর্দিন। ভরা মৌসুমে মতলবের মেঘনায় ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে জেলেদের। স্থানীয় মত্স্য বিভাগের কর্মকর্তা ও আড়তদারদের মতে, নদীতে অতিরিক্ত ডুবোচর ও দূষণের কারণে এবং ভরা বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি, বজ্রপাত না হওয়ায় সাগর ছেড়ে মেঘনায় আসছে না ইলিশ। যেখানে এই ভরা মৌসুমে মেঘনায় জেলেদের জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ার কথা; সেখানে ধরা পড়ছে অল্প কিছু ছোট আকারের ইলিশ। মেঘনার উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে ষাটনল জেলেপাড়া, ষটাকী, মোহনপুর, এখলাছপুর ও আমিরাবাদে মেঘনা অঞ্চলের জেলেরা এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন। খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে দিন চলছে তাদের।
সারা বছর মেঘনায় আশানুরূপ মাছ না পেয়ে জেলে পরিবারগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও ইলিশ মৌসুমের অতিরিক্ত আয় দিয়ে তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করেন তারা। ইলিশ মৌসুম এলেই কেবল তারা কিছুটা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখে থাকেন। কিন্তু এবার ঘটছে তার উল্টোটা। অন্যান্য বছর এই সময়ে জেলেদের জালে প্রচুর বড় বড় রূপালী ইলিশ ধরা পড়লেও এবারে তারা নদী থেকে প্রায় শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরছেন। একদিকে নদীতে ইলিশ মিলছে কম, তার ওপর জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য। এ কারণে অনেক মত্স্যজীবীই এখন এ পেশা ছাড়তে শুরু করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন মত্স্য আড়ত ঘুরে দেখা যায়, জেলেদের পাশাপাশি আড়তদাররাও অলস সময় পার করছেন। ভরা মৌসুমেও আড়তে পর্যাপ্ত ইলিশ না আসায় জেলেদের মতো তাদের সংসারেও আর্থিক অনটন দেখা দিয়েছে।
মত্স্য আড়ত ব্যবসায়ীর সভাপতি বদরুদ্দিন ভোদাই মিজি বলেন, এ বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় প্রজনন মৌসুমে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ মেঘনা উপকূলে তেমন আসেনি। যেখানে ষাটনল মালোপাড়া ১১টি মত্স্য আড়তে দৈনিক ১০ লাখ টাকার ইলিশ ঢাকা, চাঁদপুর, দাউদকান্দি ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো, সেখানে এখন ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মাছও সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তিনি আরো জানান, জেলেদের নৌকা-ট্রলার প্রতি লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন তারা।
উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ মৃধা জানান, মেঘনায় অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ইলিশ অবাধে বিচরণ করতে পারছে না। তাই ভরা মৌসুমেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া মেঘনার বদ্ধ দূষিত পানিও মাছ কমে যাওয়ার আরেকটা কারণ।