চাঁদপুর শহরের সিনেমা হল একেবারেই বিলুপ্তির পথে
বিনোদন প্রতিনিধিঃ-
চাঁদপুর শহরের (সিনেমা হল) বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রায় একেবারেই বিলুপ্তির পথে। দশ বছর পূর্বে এক সময় চাঁদপুর শহরের বিনোদন কেন্দ্র (সিনেমা হল) গুলো ছিলো বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। চাঁদপুর শহরের ছায়াবাণী সিনেমা হল এবং চিত্রলেখা ও পুরাণবাজার কোহিনুর সিনেমা হলে প্রতিদিনই লক্ষ্য করা যেতো শহর এবং গ্রাম থেকে আসা সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের সমাগম। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সেই বিনোদন কেন্দ্রের (সিনেমা হলে) এখন আর বিনোদন প্রেমী দর্শকদের ভিড় চোখে পড়ে না।
চাঁদপুর শহরে মানুষের বিনোদনের জন্য এক সময় জেলা শহরে গড়ে উঠেছিলো তিনটি মাত্র সিনেমা হল। এর মধ্যে গত কয়েক বছর পূর্বে শহরের প্রাণকেন্দ্রের ২টি সিনেমা হলই বন্ধ হয়ে যায়। হাজী মহসিন রোডস্থ রেললাইন সংলগ্ন ছায়াবাণী সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যায় গত কয়েক বছর পূর্বেই। যা ক্রয় করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী সনত্দান এম এ হান্নান। সেখানে গার্মেন্টস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে এখন। আর চিত্রলেখা হলটি একইভাবে বিক্রি হয়ে যায় এবং সেখানেও মোজাম্মেল প্লাজা নামে একটি বহুতল ভবনের কাজ চলছে। আর পুরাণবাজার কোহিনুর সিনেমা হল নামে যেটি রয়েছে সেটিও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। হয়তো যে কোনো মুহূর্তে সেটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পুরানবাজার কোহিনুর সিনেমা হলে গিয়ে সরজমিনে দেখা যায় এই বিনোদন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খুবই মন্দা। সিনেমা হলে এবং তার আশপাশের অবস্থা একেবারেই দর্শক শূন্য। হলের ভেতর মাত্র ৫/৭ জন দর্শক বসে সিনেমা দেখছে। সেই পুরনো দিনের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের দৃষ্টি নন্দিত ভিড় এখন চোখে পড়ে না। সিনেমা হলটিতে প্রতিদিন ১২টা থেকে ৩টা, ৩টা থেকে ৬টা এবং ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিনেমার শো চলে থাকে। কিন্তু হলে দর্শক হয়ে থাকে মাত্র ৫ থেকে ৭ জন অথবা ৮ থেকে ৯ জন। শুধুমাত্র সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ৩০ থেকে ৩৫ জন দর্শক হয়ে থাকে। এভাবেই প্রতিদিন মাত্র ৫/৭ জন দর্শক নিয়ে বর্তমানে চলছে শহরের একমাত্র বিনোদন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কোহিনুর সিনেমা হলটি। পুরানবাজার কোহিনুর সিনেমা হলের হালচাল সম্পর্কে জানতে গিয়ে কথা হয় হলের সহকারী ম্যানেজার মুর্তজা কামালের সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে বিনোদন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই খারাপ। আগের দিনের তুলনায় এখন আর হলে এসে সিনেমা দেখার দর্শক নেই বললেই চলে। মানুষ এখন আকাশ সংস্কৃতিতে বেশি উদগ্রীব।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে এক সময় অশ্লীল ছবির কারণে বিশাল ভাটা দেখা দিয়েছিল। পরে কিছু ভালো ছবি নির্মাণের কারণে সেই ভাটার রেশ কিছুটা কেটে গেলেও দেশের মানুষ এখন আকাশ সংস্কৃতির প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় বাংলা ছবি এবং হিন্দু ছবিগুলোতে কমার্শিায়াল নাচ থাকার কারণে দর্শকরা সেটাই বেশি লুপে নিচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও অনেক ভালো ছবি নির্মাণ করা হয়, কিন্তু যতো ভালো ছবিই তৈরি হোকনা কেনো, তা দেশের সিনেমা হলগুলোতে নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে দেখা যায় ব্যবসার লোকসানে পড়তে হয় হল মালিকদের। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট, ভিসিডি এবং মোবাইল মেমোরি কার্ড। দেশ এখন উন্নত। যে কোনো ভালো ছবি অথবা নাটক তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই তা পাইরেসি হয়ে যায়। যার কারণে, দর্শক এখন সিনেমা হলের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছে। কারণ, যে ছবিটা মুক্তি পেলে তারা হলে এসে দেখতো সেটা এখন ঘরে বসেই টিভি চ্যানেলে অথবা মোবাইলের মেমোরি কার্ডে দেখতে পায়। বর্তমানে কোহিনুর সিনেমা হলটির ব্যবসার কি অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসার অবস্থা একেবারেই মন্দা। হয়তো যে কোনো মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে চাঁদপুর শহরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র এই সিনেমা হলটিও।
এখন আর আগের তুলনায় হলে কোনো দর্শক নেই। আগে একটা ছবি মাসের প্রায় ২/৩ সপ্তাহ ধরে চলতো তবুও হলে দর্শকদের অভাব হতো না। আর এখন একটা ছবি মাত্র এক সপ্তাহ চালাতে গিয়েও হলে কোনো দর্শকের দেখা মিলছে না। আর হলে যদি দর্শকই না আসে তাহলে সে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলবে বুঝতেই পারছেন। এই হলটিতে বর্তমানে ১২জন স্টাফ কর্মরত রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই প্রায় দুই-তিন মাসের বেতন পাওনা। এছাড়াও ব্যবসা মন্দার কারণে হলের মালিক প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ঋণ আছেন। প্রতিদিন হলের আয়-ব্যয় হিসেব করলে দেখা যায় আয়ের চেয়ে ব্যয়ের সংখ্যাই বেশি। ১২ জন স্টাফের বেতন এবং হলের বিভিন্ন দিকের খরচ রয়েছে। সেই সাথে যখন বিদু্যৎ চলে যায় তখন জেনারেটর চালাতে হয়। প্রতিদিন জেনারেটর তেলের খরচ পড়ে ৫৮০ টাকা। অথচ দেখা যায় টিকিট বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫শ’ সাড়ে ৫শ’ টাকা। এভাবেই চলছে প্রতিদিন সিনেমা হলের কার্যক্রম। আর এভাবে যদি প্রতিদিন দর্শক শূন্য থাকে তাহলে হয়তো যে কোনো মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে চাঁদপুর শহরের এই একটি মাত্র বিনোদন কেন্দ্র কোহিনুর সিনেমা হলটির কার্যক্রম।