মিজান লিটন-
চাঁদপুর পৌর এলাকার রঘুনাথপুরে আবারো আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ, বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত সেখানে বাড়ি ঘরে হামলা ও পাল্টা-হামলায় ৩টি বসতঘর ও ৩টি দোকান ভাংচুর করা হয়। হামলায় আহত হয় ৫জন। এরা হলেন : তাজুল গাজী (৪০), শাকিল (১৮), ৩ বৎসরের শিশু মম ও শফিকুর রহমান লোকাল (৬৫)। এদের মধ্যে শাকিল ও তাজুল গাজীকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর শাকিলকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা রেফার করা হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। সংঘর্ষ ও হামলার খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ সেখানে টহল দেয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, গতকাল দুপুর ২টার সময় রঘুনাথপুর ওয়াপদা চৌরাস্তা বাজার থেকে হরতালকারী বিএনপির একটি মিছিল বের হলে মিছিল থেকে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম গাজীর দু’টি বসতঘরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। এ সময় নজরুল গাজীর ভাই তাজুল গাজী (৪০) ও ছেলে শাকিলের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করা হয়। এ ঘটনার পাল্টা জবাব দিতে ভাঙ্গারপুল এলাকা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা ছাত্রদলের নেতা সাঈদের বাবা শফিকুর রহমান লোকালের স্টেশনারী দোকানে এবং তাদের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল গাজী জানান, পূর্বের সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে বিএনপির ছেলেরা আওয়ামী লীগের অফিসে প্রথম হামলা করে পরে আমার বাড়িতে আক্রমণ চালায়। দুপুরে ভাত খাওয়া অবস্থায় তারা আমার ভাই ও ছেলের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত শফিকুর রহমান লোকালের মেয়ে পান্না (২৫) জানান, আমার ভাই সাঈদ ছাত্রদল করে। তার উপর হামলা করবে বলে বাড়ির সামনে হুমকি-ধমকি দেয়। ভাইকে আমরা অন্যত্র পাঠিয়ে দেই। আজ (গতকাল) ২টার দিকে একদল ছেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ি কোপাতে থাকে। তারা ঘরের ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র তছনছ করে। হামলাকারীরা ব্যাপক লুটপাট চালায়। পান্না আরো জানান, হামলারকারীরা তাদের দোকানে গিয়ে হামলা করে এবং বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে। হামলাকারীরা বাসা ও দোকান থেকে কম্পিউটার, স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায় বলে তিনি জানান। একই সময় রজব আলী মাস্টার বাড়িতে গিয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপির ফরিদ মিয়া কালুর বসতঘরে হামলা চালায়। এছাড়া রঘুনাথপুর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিল্লাল জানান, তার দোকানসহ হামিদের চায়ের দোকান, সম্রাটের পান দোকান ও কাদের খানের তরকারি দোকানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের ছেলেরা। সফিক মিয়াজীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ ও বিজিবি টহল দিয়ে চলে যাবার পর আওয়ামী লীগের লোকজন এই বাড়িতে হামলা করে।
এদিকে এসব ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহামেদ, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোর্শেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী ওচমান গণি পাটওয়ারী, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন মোঃ বাবর, যুবলীগ নেতা মোঃ আলী মাঝিসহ নেতৃবৃন্দ রঘুনাথপুর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ অফিস ও নজরুল গাজীর বাড়ি পরিদর্শন করে ঘটনার বিস্তারিত জানেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫নং ওয়ার্ড ভাঙ্গারপুল থেকে রঘুনাথপুর বাজার ও ওয়াপদা চৌরাস্তা এলাকা থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী সত্দব্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের স্থানীয় ৭-৮ জন সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এদের দেখাদেখি রঘুনাথপুর এলাকার শিশু-কিশোররাও ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারকে সাধারণভাবে দেখছে। ফলে দিন দিন রঘুনাথপুর এলাকাটি সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানায়। এই ৭-৮টি ছেলের এসব অনৈতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা মদদ যোগাচ্ছেন তারা কেউ দেশ ও দলের মঙ্গল চায় না বলে তাদের অভিমত। গতকাল রাতেও উভয় গ্রুপ আবার সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানা গেছে।