বিএনপি নেতা, সাবেক মন্ত্রী মো. নূরুল হুদা মনে করেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যই দেশকে কৃত্রিম সংকটে ফেলা হয়েছে। সরকার উচ্চ আদালতের একটি রায় নিয়ে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কাজেই সংকট নিরসনের দায়িত্বও সরকারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করলে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই পাহাড়সম এ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী নূরুল হুদা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে শুধু একটি ঘোষণা দিতে হবে। সেটি হলো_ আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে অতীতের মতোই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেওয়ার পর দেশে আর রাজনৈতিক কোনো সংকট থাকবে না।’
জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলের রাজনীতি সম্পর্কে নূরুল হুদা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে। তারা কমিউনিস্ট, বাম দল, নাস্তিকদের নিয়ে সরকার পরিচালনা করে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ অবশ্যই আগামীতে ব্যালটের মাধ্যমে এর দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত। আর এটা বুঝতে পেরেই ক্ষমতাসীনরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। ইতোমধ্যে পাঁচ সিটিতে জনগণ ভোটের মাধ্যমে রায় দিয়েছেন।’
প্রবীণ এ রাজনীতিক সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনার তো ক্ষমতার প্রতি এত লোভ থাকার কথা নয়। কারণ তিনি ছিলেন বিশাল হৃদয়ের এক জননেতা। কিন্তু শেষ সময়ে শেখ মুজিবও বাম নেতাদের খপ্পরে পড়ে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠন করেছিলেন।’
নূরুল হুদা ১৯৫৪ সালে স্কুলে পড়ার সময় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরি ছেড়ে চাঁদপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরই ৪ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন।
বিএনপির মনোনয়নে একই আসন থেকে ‘৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালেও নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে সরকারের প্রথম ছয় মাস তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তী দুই বছর সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নূরুল হুদা ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশব্যাপী দলীয় বিপর্যয়ের কবলে পড়ে পরাজিত হলেও আবারও নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সততার সঙ্গে আপসহীন এই নেতা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীতে ভাড়া বাসায় থাকেন।
খালেদা জিয়ার ‘নতুন ধারার সরকারকে’ তিনি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, ‘দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হবে। সৎ, ত্যাগী ও দক্ষদের নিয়ে সরকার গঠনের পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের দিয়ে সংগঠন সাজানো হবে। আর দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনের মাধ্যমে সবক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে পরবর্তী বিএনপি সরকারের মূল লক্ষ্য। উন্নয়ন আর ব্যাপক কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবেন হবু প্রধানমন্ত্রী।’
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল হুদার মতে, ‘কী আওয়ামী লীগ, কী বিএনপি, সব রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচনের আগে তাড়াহুড়ো না করে এলাকায় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাধ্যমে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। কমপক্ষে তিন থেকে চার মাস আগে সব এলাকার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে। তাহলে নির্বাচনের আগ মুহূর্তের জটিলতা আর মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ থাকবে না।’