রমজানের ৩ দিন পূর্ব পর্যন্ত সিলেট থেকে জেদ্দা অভিমুখে যে ফ্লাইট যাচ্ছে সেখানে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ওমরাহ হজ প্যাকেজে সৌদি আরবে যেতে পারছেন যাত্রীরা। কিন্তু পরবর্তী ফ্লাইটে বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। রমজানের শেষ ১০ দিনের প্যাকেজ গিয়ে ঠেকছে ২ লাখ টাকায়। এভাবে ফ্লাইটে ফ্লাইটে সিলেট থেকে বাড়ানো হচ্ছে ওমরাহ হজ প্যাকেজের দাম। ঢাকা থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সে টাকার অঙ্ক কিছুটা কম হলেও ভোগান্তির জন্য সিলেটের যাত্রীরা ঢাকা হয়ে যাচ্ছেন না। এই সুযোগে বিমানও বাড়িয়েছে ভাড়া। সিলেটের এক ট্রাভেলস ব্যবসায়ী জানিয়েছেন- ওমরাহ যাত্রীদের জন্য গতকাল তিনি দুটি টিকিট কিনেছেন ১ লাখ ৩১ হাজার করে। অর্থাৎ ২ লাখ ৬২ হাজার টাকায় তিনি দুটি টিকিট কিনেন। সপ্তাহে সপ্তাহে বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি এবং মক্কা ও মদিনা আবাসন সংকটের কারণে এবার লাগামহীনভাবে বেড়েছে ওমরাহ হজ প্যাকেজের দাম। ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকরা জানিয়েছেন- গত ঈদুল আজহার পর সিলেট থেকে ১ লাখ ১৫ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ওমরাহ হজ তারা চালু করেছিলেন।
সেটি গত মাস পর্যন্ত বহাল ছিল। কিন্তু রমজানে এসে সেটি বেড়েই চলেছে। প্রতি সপ্তাহে বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দাম বাড়ছে।
তারা জানিয়েছেন- সিলেট থেকে এই রমজানে কয়েক হাজার মানুষ ওমরাহ হজে যাচ্ছেন। তারা যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, সেখানে প্যাকেজের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। আবার অনেকেই যেতেও পারছেন না। হঠাৎ করে বিমানের টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। আটাব সিলেটের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার জলিল গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- রমজানের ৩ দিন আগে তার যাত্রীক ট্র্যাভেলস থেকে হজ যাত্রীদের একটি কাফেলা যাচ্ছে। সেখানে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার করে প্যাকেজের দাম নিয়েছেন। কিন্তু পরের ফ্লাইটে ওমরাহ প্যাকেজে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। বেশি দামে টিকিট কেনার কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। আর রমজানের শেষ ১০ দিনের জন্য তিনি ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এই দামে শেষ পর্যন্ত প্যাকেজ ধরে রাখতে পারবেন কিনা- সেটি নিয়ে সন্দিহান তিনি। জানান- রমজানের ওমরাহ হজে কোনো ফ্লাইটে তারা লাভের মুখ দেখছেন না। বরং লোকসান হচ্ছেন। এদিকে- ট্রাভেলস এজেন্সির মালিকরা জানিয়েছেন; শুধু বিমানের টিকিটের মূল্যই বেশি নয়, এবার মক্কা ও মদিনায় হোটেল ভাড়া বেড়েছে। দুই থেকে তিনগুণ হোটেল ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে প্যাকেজের মূল্যও বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন- রমজানের শেষ ১০ দিনের জন্য হোটেল ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দুই লাখ টাকা ওমরাহ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও লোকসান হবে। কারণ- গোটা বিশ্ব থেকেই ওমরাহ যাত্রীরা রমজানের শেষ ১০ দিন মক্কা, মদিনায় যান। এজন্য হোটেল ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমান যখন ভাড়া বৃদ্ধি করে তখন বিদেশি এয়ারলাইন্সও ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এতে ঢাকা হয়ে প্যাকেজ করলেও টাকার অঙ্ক তেমন কমে না। সিলেটের সিটি ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হক মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আগে যেখানে ২০০ রিয়ালে হোটেল ভাড়া পাওয়া যেতো এখন সেটির দাম ৪০০ থেকে ৫০০ রিয়াল। রমজানে অধিক সংখ্যক ওমরাহ যাত্রী থাকেন। এ কারণে হোটেল পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হোটেল নিতে হয়, এ কারণে বেড়ে যায় ওমরাহ হজ প্যাকেজের দাম। সিলেটে শিপার এয়ার ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন- রমজানে সাধারণত চাপ বেশি থাকে। এজন্য বিমান ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এবার সিলেট থেকে কয়েক হাজার যাত্রী ওমরাহ হজে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। সিলেট হাব’র সাবেক সভাপতি মনসুর আহমদ খান জানিয়েছেন- এবারের ওমরাহ হজ প্যাকেজের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। যে টাকায় প্যাকেজ নেয়া হচ্ছে, হিসাবে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। এজন্য অনেকেই প্যাকেজ করতে ভয় পাচ্ছেন। করছেনও না। তিনি জানান- গত ৬-৭ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে হোটেল ভাড়াও। বাংলাদেশ বিমানের সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার মনসুর আহমদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন- বিমানের ভাড়া নির্ধারণ হয় ঢাকা থেকে। আমরা যে নির্দেশ পাই সেভাবে টিকিট বিক্রি করি। এখানে সিলেট থেকে আমাদের কিছু করার নেই।