মিজানুর রহমান রানা, এমএ আকিব, আশিক বিন রহিম
চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখার মোড় এলাকায় রয়েল হাসপাতালে (প্রা.) শনিবার সকালে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক ডাক্তারের ওপর হামলা, ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট সংঘটিত হয়েছে। এই ঘটনায় জেলা বিএমএ জেলার সব হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক, প্যাথলজি সেন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বার ২৪ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ ঘোষণা করেছে।
জানা যায়, শনিবার সকাল ৮টায় চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মুন্সীবাড়ির শামছুল হক মুন্সী (৬৮) কে ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ওইদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আশিষ পান্ডে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় রেফার করেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজন তাকে ঢাকায় না নিয়ে ওই হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসার জন্য সময় ব্যয় করলে রোগীর অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক ধারণ করে। পরে তাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে রোগীর আত্মীয়-স্বজন এই খবর পেয়ে বেপরোয়াভাবে চাঁদপুর রয়েল হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর এবং কর্তব্যরত ডাক্তারকে তৃতীয় তলা থেকে মারতে মারতে এক পর্যায়ে তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময়ও রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ওই ডাক্তারকে টেনে হেঁচড়ে ২য় তলায় নামিয়ে আনেন। সেখানে ডাক্তারকে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় বেদম মারতে থাকলে পুরো হাসপাতালের মেঝে ডাক্তারের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। পরে ডা. আশিষ পান্ডেকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অন্যদিকে ওই রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা এমনই বেপরোয়া হয়ে যায় যে, তারা এর আগে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও সুমন নামে এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকেও বেদম পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় হাসপাতালের অন্যসব রোগীরা ভয়ে হতভম্ভ হয়ে এদিক সেদিক পালিয়ে যায়।
চাঁদপুর রয়েল হাসপাতাল ভাংচুর ও ডাক্তারের ওপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. আবদুল কাইয়ুম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং জেলা বিএমএ, স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুন নবী মাসুম জানান, এ ঘটনায় আমরা আগামীকাল (আজ রোববার) দুপুর ২টা পর্যন্ত সকল প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার কর্মবিরতী ঘোষণা করা হয়েছে। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তার ও হাসপাতালের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হয়, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
এ ঘটনায় রয়েল হাসপাতালের ম্যানেজার মাইনুদ্দিন জানান, সন্ত্রাসীরা ডাক্তারের ওপর নগ্ন হামলা শেষে হাসপাতালের স্টাফদের ওপরও হামলা চালায় এবং হাসপাতাল ভাংচুর করে অফিসের ক্যাশ ভেঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলিজি ও ডাক্তারদের চেম্বার বন্ধ থাকায় জেলার দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
শিরোনাম:
শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।