করোনার প্রভাব দেশের দারিদ্র্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই পড়েছে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। করোনা মহামারির সময় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেটি ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে করোনার কারণে শহরের সমাজে নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। গত বছর মোট দরিদ্রের ৫১ শতাংশই ছিল নতুন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, শহরে অতি দরিদ্র ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবারের সন্তানেরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে। দরিদ্র পরিবারে এই হার ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ আর নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে ঝরে পড়ার হার ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিনায়ক সেন বলেন, শহুরে মোট দরিদ্রের প্রায় ৫১ শতাংশ নতুন, যারা নিম্ন-মধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সংকটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। করোনা শুরুর দিকে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ ছিল। তবে ২০২২ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ঢাকা শহরে কমে আসে দারিদ্র্য। ২০১৯ ও ২০২২-এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। করোনার সময় দারিদ্র্য বাড়লেও এটা ছিল সাময়িক, যা পরে কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্বাভাবিকের জায়গায় চলে যায়। উল্লেখ্য, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে দেশে দরিদ্রের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিনায়ক সেন উল্লেখ করেন, করোনার সময় বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির নানা আশঙ্কা করা হলেও জরিপে তেমন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ৮০ শতাংশ অবস্থার উন্নতি করতে পেরেছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন।
তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষা খাত নিয়ে। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। শহরের অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘স্পেশাল এডুকেশন রিকভারি পোগ্রাম’ নেওয়ার শুপারিশ করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সম্পদ যখন সৃষ্টি হয়, তখন বৈষম্য অবধারিত। বৈষম্য প্রশমনে আমরা কাজ করছি। সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি।’