কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শাহপুর দরবার শরীফের মরহুম পীর সাহেব কেবলা ড. শাহজাদা শেখ আহমদ পেয়ারা বাগদাদী আল কাদেরী (রহঃ)-এর ভাগ্নির উপর পৈশাচিক নির্যাতনকারী মাওঃ মোঃ শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে কচুয়া থানা পুলিশ। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের সার্বিক নির্দেশনায়, কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন মজুমদারের নেতৃত্বে থানার অপারেশন অফিসার এসআই মোঃ ছাদেকুর রহমান ভারতের সীমান্ত লাগোয়া কুমিল্লার বিবির বাজার এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গত শুক্রবার গভীর রাতে কোতয়ালী থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করেন। গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁদপুরের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করলে আদালত আটক শফিককে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১২ অক্টোবর ‘১৪ দায়ের করা দরখাস্ত মামলা নং ৩১৪/১৪-এর বিবরণ থেকে জানা গেছে, কুমিল্লার শাহপুর দরবার শরীফের মরহুম পীর সাহেব কেবলা ড. শাহজাদা শেখ আহমদ পেয়ারা বাগদাদী আল কাদেরী (রহঃ)-এর ছোট বোন চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোডের স্থায়ী বাসিন্দা চৌধুরী গোলাম ছামদানী কাদেরীর ছোট মেয়ে সিদরাতুল মোনতাহার সাথে কচুয়া উপজেলার মেঘদাইর গ্রামের দাইমুদ্দিন প্রধানের ছেলে মোঃ শফিকুল ইসলামের ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী বিবাহ হয়। ২৮ আগস্ট ২০০০ সালে ওই বিয়ের উকিল পিতা ছিলেন ড. শাহজাদা শেখ আহমদ পেয়ারা বাগদাদী আল কাদেরী (রহঃ) নিজেই। তিনিই বড় শখ করে শফিকুল ইসলামের সাথে বোনের মেয়ে সিদরা তুল মোনতাহার বিয়ে দেন। সে সময় শফিক সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মদিনায় থাকতেন। মদিনার তরিক সুলতানা এলাকায় তার একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিলো। বিয়ের ৪ মাস পর সিদরাতুল মোনতাহাকে মদিনায় নিয়ে যায় শফিক। ওই সময় তাকে বিদেশে নেয়া এবং ব্যবসার কথা বলে ৩ লাখ টাকা যৌতুক নেয় শফিকুল ইসলাম। মদিনায় তাদের দুটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বড় ছেলে আহাম্মদ নুরুল আবরার (১৩) ও মেঝ ছেলে মোহাম্মদ নুরুল আছরার (১২) দুজনই প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে মোহাম্মদ গোলাম জিলানী নুর মিয়া (৭) ২০০৭ সালে কুমিল্লা মুন হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে। ওই সময় চাঁদপুরের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রইস উদ্দিন পরামর্শ দেন যে করেই হোক ওই দিনই অপারেশন করাতে হবে, নয়তো এই সন্তানও প্রতিবন্ধী হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে কুমিল্লায় নিয়ে অপারেশন করা হলেও আপত্তি তোলে শফিক। এই নিয়েও বহু অশান্তি হয়।
সিদরাতুল মোনতাহার সংসার জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে মদীনায় যাওয়ার ৩ মাস পরেই। যদিও মদীনার বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই থাকতেন, কিন্তু প্রতিনিয়ত তাকে বন্দী জীবনযাপন করতে হতো। দরজার বাহির থেকে সবসময় তালা দিয়ে রাখা হতো। একা থাকলে ভয় লাগে এমন অভিযোগ করলে তাকে তাবিজ-কবজ ব্যবহার করতে চাপ দেয়। কিন্তু সে তাবিজ ব্যবহার করবে না এ কথা বলতেই শুরু হয় নির্যাতন। ছেলেরা কেনো প্রতিবন্ধী হলো এটাও নাকি মায়ের দোষ, এ জন্যও শারীরিক নির্যাতন ভোগ করতে হতো। চুন থেকে পান খসলেই চলে নানান নির্যাতন। প্রথমে হাত দিয়ে, তারপর লাথি এরপর হাতের কাছে যা পাওয়া যেতো তা দিয়েই শারীরিক নির্যাতন করা হতো। সিদরাতকে মারার জন্য বাসায় মোটা বেতের লাঠি নিয়ে আসে। তা দিয়েই চলতো মধ্যযুগীয় বর্বরতা।
নানা সময়ে নির্যাতন করে শফিক সিদরাতুল মোনতাহার কাছ থেকে ৩টি খালি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নেয়। ২০০৭ সালে চরম নির্যাতের কারণে একবার মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়। তখন সকলের অনুরোধে সামাজিকভাবে সমাধান করে দেয়া হয়। বাগদাদী হুজুর নিজেও তাঁর জীবদ্দশায় বহু সালিস করে সংসার জোড়া দিয়েছেন। হুজুরের বড় বোন আমেরিকা প্রবাসী গাউছ পিয়ারীও বহুবার সংসার জোড়া দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি নবীর রওজায় হাত রেখে শফিককে ওয়াদা করিয়েছেন যেন সে আর নির্যাতন না করে। কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি। গাউছ পিয়ারী মদীনা ছেড়ে যে দিন আমেরিকা চলে যান সে দিনই সিদরাতের ওপর শারীরিক নির্যাতন করে ওই শফিক। এক পর্যায়ে মদীনায় জেল খেটে দেশে ফিরে সে।
চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অনুযায়ী কচুয়া থানা পুলিশ গত ১৬ অক্টোবর ‘১৪ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ১১(গ)/৩০ধারায় মামলা রুজু করে। মামলা নং ১৬।