প্রতিনিধি ঃ
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ধর্ষন মামলার বাদীনিকে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকিসহ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বাদীনির পরিবার এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় এ তথ্য দেন মামলার বাদীনি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের হারুনুর রশিদের স্ত্রী রাবেয়া বেগম।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ৩মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষে পার্শ্ববর্তী টামটা গ্রামের খাসের বাড়ির মৃত মক্রম আলীর পুত্র সোলেমান (৬০) কর্তৃক ধর্ষিত হয় শংকরপুর গ্রামের হারুনুর রশিদের একমাত্র কণ্যা (১৪)। সে টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনাটি বিবিধ কারণে বিলম্বিত হলেও অবশেষে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার মা রাবেয়া বেগম। যার নং-শাহরাস্তি মডেল থানা -০৪, তাং-১০/০৩/২০১৬, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ৯ (১)।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ধর্ষিতার পিতা চট্রগ্রামে ড্রাইভিং পেশায় কাজ করে কোনো রকম সংসার চালান। আর মা গ্রামের বাড়ি থেকে সন্তানদের লেখাপড়া করান। ঘটনার দিন সকাল ৭ টায় মামলার বাদীনি তার ছোট ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা জনিত কারণে কুমিল্লার সুয়াগাজী যান। এ সময় বড় পুত্র সহপাঠীর সাথে খেলতে যায়। মেয়ে তাদের নিজ ঘরের সামনের দরজা বন্ধ করে শয়ন কক্ষে শুয়ে থাকে। এমন সময় ধর্ষক সোলেমান পিছনের দরজা দিয়ে গোপনে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ওই কণ্যার মুখ চেপে ধরে তার ওড়না গুজে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মুখে গুজে রাখা ওড়নাটি বেরিয়ে গেলে সে চিৎকার করে উঠে। এতে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে এবং এ সুযোগে ধর্ষক সোলেমান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আশ্বাস দেন। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুরাহা হয়নি তখনি ধর্ষিতার মা আইনের আশ্রয় গ্রহন করেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদীনি রাবেয়া বেগম বলেন, আমার একমাত্র কণ্যার শিক্ষা জীবন, সামাজিক জীবনসহ তার ভবিষ্যত বিপন্ন হওয়ার সম্মুখীন। এ সমাজে অত্যন্ত অসহায়-নিরীহ জীবন যাপন করছি আমরা। শুধুমাত্র সন্তানদের সু-শিক্ষিত করে গড়ে তুলতেই জীবন সংগ্রামে নেমেছি। অথচ আজ মাত্র একটি ঘটনার কারণে সংসারের প্রত্যেকের জীবন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। তাদের হুমকি-ধমকির কারণে হয়েছি ঘর ছাড়া। বন্ধ রয়েছে সন্তানদের স্কুলে যাওয়া। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, মামলা তুলে নেয়ার জন্য সোলেমানের ভাই জাকির হোসেন, তার দুই ছেলে জহির ও লিটন এবং মেয়ের জামাই রবিউল হোসেন ওরফে সূজন নানা ভাবে আমার কণ্যা-পুত্রদের এমনকি আমাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও আমার ঘরে রাতের অন্ধকারে অন্য পুরুষ ঢুকিয়ে অপবাদ দিয়ে সমাজ ছাড়া করার হুমকি দেয় তারা। পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন মহল, সুশীল সমাজবাসিসহ এলাকার প্রত্যেকের কাছে এমন নিষ্ঠুর ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের প্রার্থনা করেন তিনি।
মামলার আসামী ধর্ষক সোলেমান জেল হাজতে থাকায় তার পরিবারের সদস্যদের স্বাক্ষাতে গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। এ ব্যপারে এলাকবাসি জানান, লম্পট সোলেমান অতীতেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার দায়ে তার ছেলে লিটন এক বছর জেল খেটে ফিরেছে। তাদের দৌরাত্বতা সম্পর্কে এলাকার সবারই জানা রয়েছে। তার মেয়ের জামাতা শোরসাকের সূজন একাধিক মামলার আসামী। অথচ বড় বড় অপরাধ করার পরও এ সমাজে বুক ফুলিয়ে চলছে তারা। কোথায়, কার কাছে তাদের এমন জুলুমের শক্ত খুঁটি-তা আমাদেরও জানা নেই। তবে সর্বশেষ ঘটনায় বর্তমানে এলাকায় অত্যন্ত ক্ষোভ বিরাজ করছে। ধর্ষকের এমন কঠিন বিচার হওয়া উচিত-যা দেখে আর কেউ কখনো এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা না ঘটায় এই দাবীই জানান তারা।