মোঃ আমিনুল ইসলামঃ
শাহরাস্তিতে ২ প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় নগদ অর্থ ও স্বর্নালংকার লুট হয়েছে । এ সময় ডাকাতদের আঘাতে কিশোরীসহ ৩ ব্যক্তি আহত হয়েছে। ঘটনাটি গত রোববার দিনগত রাতে উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ২টি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়।
জানা যায়, ঘটনার রাত আড়াইটার দিকে ৮/১০ জনের সংঘবদ্ধ মুখোসধারী হাফপ্যান্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ডাকাতদল ওই ইউনিয়নের নোয়াপাড়া মজুমদার বাড়ির মৃত সৈয়দ মিয়া মজুমদারের পুত্র প্রবাসী হারুন অর রশিদের বসতঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় ডাকাতরা হারুন অর রশিদের পুত্রবধু খাদিজা আক্তার মনিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলমিরার চাবি চায়। একপর্যায়ে পরিবারের ছোট্র শিশুকে জবাই করার হুমকি দিয়ে চাবি নিয়ে নগদ ৮৬ হাজার টাকা, ৭ টি মোবাইল ফোনসেট, ৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুটি বিদেশী টর্চ নিয়ে যায়। এ ব্যপারে হারুন অর রশিদের পুত্র আরিফ হোসেন (২৭) জানান, ডাকাতরা ৮ জন ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় আরো কয়েকজন জন বাইরে পাহারারত ছিল। তারা ছুরি ও চাপাতি প্রদর্শন করে আমাদের জিম্মি করে প্রথমে সকলের মোবাইল ফোন, এরপর নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও টর্চ লাইট নিয়ে যায়। এর আগে একই ডাকাতদল রাত ১ টার দিকে পার্শ্ববর্তী পরাণপুর গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের পুত্র মোঃ আব্দুল হাকিমের বসত-ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় একমাত্র গৃহকর্তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১০ হাজার টাকা, ৬ টি মোবাইল ফোন, ২ টি বিদেশী টর্চ লাইট ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয় । এ ঘটনায় আব্দুল হাকিমের ৯ম শ্রেনী পড়ুয়া কিশোরী কন্যাকে (১৫) ছুরিকাহত, পুত্র মুজাম্মেল (২৭) ও পুত্রবধু মায়াকে (২২) পিটিয়ে এবং পদপিষ্ট করে আহত করে। এ ব্যাপারে আব্দুল হাকিম জানান, ঘটনার রাত দেড়টার টার দিকে ঘরের মূল দরজা ভেঙ্গে মুখোশ পরিহিত ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে প্রত্যেককে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর মোবাইলগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং ঘরের স্টীলের সিন্দুক ভেঙ্গে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
ডাকাতি শেষে ডাকাতরা পালিয়ে যাবার প্রাককালে ক্ষতিগ্রস্তদের ডাক চিৎকারে মসজিদের মাইকে ডাকাতদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় ব্যরিকেট দিলেও ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হয় নি। এ ব্যপারে খিলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সহকারী উপ পরিদর্শক মোঃ রকিবুল ইসলাম জানান, আমরা বেরনাইয়া বাজার হতে টহলরত অবস্থায় মাইকে ডাকাতি হচ্ছে এমন ঘোষণা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করলেও তাদের আটক করা সম্ভব হয় নি।
এ দিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারী সোমবার গভীর রাতে উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়। জানা যায়, ওই ইউনিয়নের পরাণপুর গ্রামের মুন্সি বাড়ির মৃত সুলতান আহম্মদের পুত্র সিরাজুল ইসলাম, আবু জাফর মুঞ্জুর হোসেনের পাকা এক তলা বসত-ঘরের দরজা ভেঙ্গে ৮/৯ জনের একটি মুখোশধারী ডাকাত দল প্রবেশ করে। এ সময় একমাত্র গৃহকর্তা সিরাজের হাত, পা ও মুখ বেঁধে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয় । এ ঘটনায় গৃহকত্রী মরিয়ম বেগম ও তার কণ্যা জান্নাত আহত হয়। একই রাত আড়াই টায় কুরকামতা গ্রামের সিরাজের ঘরে দূর্র্ধষ ডাকাতি সংগঠিত হয়। জানা যায়, ৮/৯ জনের একটি ডাকাত দল ঘরের পিছনের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় টের পেয়ে চিৎকার করলে সিরাজের স্ত্রী কুসুম বেগম (৩৩) কে হাতের অস্ত্রে দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনার পর রক্তাক্ত গৃহ বধুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরদিকে আহম্মদ নগর কাইথরা গ্রামের মৃত সুজ্জত আলীর পুত্র রুহুল আমিন মাষ্টারের বাড়িতে ডাকাতি সংগঠিত হয়। এতে কেই হতাহত না হলেও নগদ ৪৫ হাজার টাকা, ১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২শত সৌদি রিয়াল লুট হওয়ার ঘটনা ঘটে।
৬ মাসেও পূর্বের সংগঠিত ডাকাতির রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। পূর্বের সংগঠিত ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ডাকাতির সাথে এলাকার চিহ্নিত কিছু লোকজন জড়িত এমন কথা প্রচারিত হলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষ হতে কোন মামলা দায়ের না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ডাকাতির ঘটনায় এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় পরবর্তীতে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকায় আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থের স্বজনরা জানান। বর্ষায় এলাকার রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত থাকায় পুলিশের টহলদল যেসব স্থানে পৌঁছতে দেরী হয় এমন স্থান ডাকাতরা বেছে নিচ্ছেন বলেও এলাকাবাসি জানান।