জিয়াউর রহমান বেলাল
স্কুল ছাত্র শাহেদ চৌধুরী (১৫) হত্যা রহস্য উন্মোচনে চাঁদপুর জেলা পুলিশের পৃথক তিনটি চৌকস ও শক্তিশালী টিম মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। সেই সাথে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অনুযায়ী সন্দেহভাজন আসামী সাহেদের ছোট বোন আটক হীরা ও তার প্রেমিক মুনের তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার অতিবাহিত হয়েছে। আজ বুধবার রিমান্ড শেষে তাদেরকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অসীম কুমার দে’র আদালতে হাজির করানো হবে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত নানা তথ্য-উপাত্তে শাহেদ হত্যার মূল রহস্য থলের বিড়ালের ন্যায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝি ও লেংটা বাড়ির লিয়ন (২০)কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদের মধ্যে চাঁদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মাঝিকে শাহেদ হত্যায় সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয় এবং অপর সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে লেংটা বাড়ির লিয়নকে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ আটক করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝি ও লেংটা বাড়ির লিয়নকে পুলিশের তিনটি টিম তথা চাঁদপুর জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ পৃথক পৃথকভাবে আবার যৌথভাবে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ধরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাদেরকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ছেড়ে দেয়া হয়। শাহেদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর মডেল থানার এসআই মোঃ আনোয়ার হোসেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথার সত্যতা স্বীকার করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফরের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামের সার্বিক সমন্বয়ে পুলিশের দক্ষ তিনটি টিম শাহেদ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যাপকভাবে কাজ করছে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শাহেদ হত্যার ২/৩ মাস পূর্বে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝির সাথে তার শাহেদের পরিচয় ঘটে বোন হীরার বন্ধু লিয়নের মাধ্যমে। এ সুবাদে মোহাম্মদ আলী মাঝি শাহেদের সাথে সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং লিয়নের সাথে শাহেদদের আলিম পাড়াস্থ বাসায় বেশ ক’বার আসা-যাওয়া করে। তারই ধারাবাহিকতায় পুরাণবাজারের চানাচুর ফ্যাক্টরীর মালিক যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝি প্রায় প্রতিদিনই শাহেদ ও লিয়নের পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে। যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝি পঁয়ত্রিশ ঊর্ধ্ব ব্যক্তি হয়ে ১৫ ও ২০ বছরের সুদর্শন দু তরুণের (শাহেদ ও লিয়ন) সাথে অসম বয়সের বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং তাদের পেছনে প্রায় প্রতি দিনই মোটা অঙ্কের টাকা কেনো খরচ করে তা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের খতিয়ে দেখার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী মাঝি ও লেংটা বাড়ির লিয়নের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্য-উপাত্ত বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে আবারও ডেকে আনা হবে। অপর একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ক’জন নেতার জোর টেলিফোনের তদবিরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। অবশ্য পুলিশের ওই সূত্রটি টেলিফোনে তদবিরের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানায়, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। সময় হলেই সব রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুলিশ শাহেদ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে বলে সূত্রটি দাবি করে।