প্রাত্যহিক সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত থাকলেও সরকার টিকা নিশ্চিত করেই অন্তত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠান খুলতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা প্রদানের হার সন্তোষজনক হলেও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করা আরও সময়সাপেক্ষ।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে সংক্রমণের হার যে বাড়ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সাধারণত সংক্রমণের গড় ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুরু করা হয়েছিল। আর অন্যান্য ক্লাসও শুরু করা হবে পর্যায়ক্রমে। এখন লকডাউন শেষ হলে অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবস্থা শুরু করা হবে। সব প্রতিষ্ঠান কবে নাগদ খোলা হচ্ছে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা খোলার সঙ্গে গুরুত্ব দেব যেসব পরীক্ষা
স্থগিত রয়েছে, সেগুলো নেওয়ার ওপর। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিষয় এবং সময় কমিয়ে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১৭ মার্চ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। অন্তত ২২ বার বাড়িয়ে ছুটি আছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রায় সবাই টিকা নিয়েছেন। এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও টিকা নিচ্ছেন। তবে স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বয়সের বাধায় টিকা গ্রহণ আটকে আছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন আগে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করতে হবে। যা ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। শিক্ষক আছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৩ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৪৭ হাজার ৭৬৬ জন। এর মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের অনেকেই প্রথম ধাপে টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে এখন ২৫ বছর বয়সী বিভিন্ন ক্যাটাগরির নাগরিকরা টিকা পাচ্ছেন। অন্যদিকে ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ১৩ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী, ৪ হাজার ১০০ শিক্ষক এবং ৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামের তালিকা এনআইডিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলে ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও এনআইডি না থাকায় ১৮ হাজারকে তালিকাভুক্ত করা যায়নি।
এ ছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের তালিকা পাঠিয়েছি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী তথ্যছক পূরণ করেছে। সবার এনআইডি কার্ড নেই। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হলে সবাইকে এনআইডি কার্ড দিতে হবে নতুবা আমাদের যে রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে- সেটির মাধ্যমে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকারি পর্যায়ের শতভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও জনবলকে টিকা দিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি ও নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে। পাশাপাশি তা পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর এনআইডি না থাকায় এই কর্মসূচি বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, এখনো করোনা সংক্রমণের হার কমেনি। এখন নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ বিষয়ে প্রশাসন ভাবছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।