ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ থাকবেই। কিন্তুু সে চাপ কখনোই সন্তানের ওপর চাপাবেন না। আপনার সন্তানকে এমন কিছু বলবেন না, যা শুনে সে কষ্ট পায়, রেগে যায় বা দ্বিধান্বিত হয়। আমরা জানবো, সন্তানের প্রতি আমাদের করণীয়।
কোনো বিষয়ে জোর করবেন না :
শিশু যখন মর্মাহত হয়, কষ্ট পায় বা ভয় পায় তখন সে কাঁদে। জোর করে কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না। তার কান্না থামানোর জন্য বেশির ভাগ বাবা-মা’ই বলে থাকেন ‘কেঁদো না’ বা ‘কাঁদার মতো কিছু হয়নি’। এই কথাগুলো বলা ঠিক নয়। কারণ শিশু প্রাথমিকভাবে কান্না বন্ধ করলেও তার মনে এই ধারণা জন্মায় যে, তার অনুভূতির সঠিক মূল্যায়ন আপনি করছেন না। তাই কেনো কাঁদছে তার সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করুন এবং বুঝিয়ে বলুন। ফলে আপনার সাথে তার বন্ধুত্ব তৈরি হবে। সে তার যেকোন অনুভূতির কথা অনায়াসে আপনাকে বলতে পারবে।
বার বার ‘তাড়াতাড়ি করো’ বলবেন না :
আপনার সন্তানটি হয়তো সকালে নাস্তা খেতে খুব দেরি করে বা তার স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে দেরি করে। এজন্য আপনি যদি তাকে শাস্তি দেন বা তাড়াতাড়ি কর কথাটি বারবার বলেন, তাহলে সে খুব বাড়তি চাপ অনুভব করবে। তাই আপনার কণ্ঠস্বর নরম করে বলুন, ‘চলো তাড়াতাড়ি করি’ এতে সে বুঝতে পারবে যে আপনিও তার দলেই আছেন। কিংবা কোথাও যাওয়ার সময় দু’জনে একসাথে রেডি হোন এবং বলুন ‘চলো দেখি কে আগে তৈরি হতে পারে। এতে সে জলদি কাজ শেষ করা শিখবে কোনরকম মানসিক চাপ ছাড়াই।
কারো সাথে তুলনা করবেন না :
একটি শিশুর জন্য সবচেয়ে খারাপ অনুভূতি হচ্ছে যখন তাকে তার সহদর বা অন্য কোন শিশুর সাথে তুলনা করে বলা হয় যে, ‘তুমি ওর মতো হতে পারো না’! এতে শিশুর মনোবল নষ্ট হয় এবং যার সাথে তুলনা করা হচ্ছে তার প্রতিও হিংসা সৃষ্টি হয়। প্রতিটা শিশুই অনন্য। তার সেই অনন্যতাকে ভালোবাসা এবং বিকশিত হতে সাহায্য করার প্রথম দায়িত্ব বাবা-মা’র।
কমান্ড করবেন না :
এটা করো, সেটা করো, এভাবে বলবেন না। ‘আমাকে একা থাকতে দাও’। যখন আপনি আপনার সন্তানকে ক্রমাগত এই কথাটি বলতে থাকবেন যে,‘আমাকে একা থাকতে দাও’ বা ‘আমাকে বিরক্ত করবে না’ বা ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি’, তখন সে মনে করে যে আপনি তাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। যে শিশুর শৈশবে এই বিষয়টি বেশি হয়ে থাকে সে বড় হয়ে তার সব কথা তার মা-বাবাকে বলতে পছন্দ করে না। যখন আপনার কাজের খুব চাপ থাকবে তখন কাজ শুরুর আগেই আপনার সন্তানকে বলুন যে, ‘আমাকে এখন এই কাজটি শেষ করতে হবে, এই সময়ে তুমি চুপচাপ বসে ছবি আঁকো। কাজটি শেষ হলে আমরা মজা করবো’। যেটুকু সময় বাসায় থাকবেন সন্তানের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। অযথা রাগারাগি করবেন না। কর্মস্থলের রাগ সন্তানের ওপর ঝাড়বেন না।
এই বিষয়ে তুমি এখনও খুব ছোট :
সন্তানকে বয়স অনুযায়ী সব কাজে সাথে রাখুন। তাকে বলা যায়, এমন সব বিষয়ে আলোচনা করুন তার সাথে। তার মতামতের গুরুত্ব দিন। তাকে মূল্যায়ন করুন। দেখবেন একদিন আপনার সন্তানটিও আপনার নির্ভরতার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ছোট বলে তাকে ছোট করে রাখবেন না।
সন্তানকে পরিশ্রমী হতে শেখান :
‘মানুষ পরিশ্রম করলে সব বাধা অতিক্রম করে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে’ এই কথাটি তাকে গল্পের ছলে বলুন। নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়, তা তাকে শেখান। পরিবারের প্রত্যেককে কাজে সহযোগিতা করা উচিত। সবার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবা উচিত। ছেলে-মেয়ের কাজ আলাদা বলতে কিছু নেই। সব কাজ সবাইকে করতে হয়।
আত্মবিশ্বাসী হতে শেখান :
সন্তানকে শেখান, ভালো কিছুর প্রতিদানে ভালো কিছু পাওয়া যায়। সবসময় পজেটিভ থাকতে হবে। পারা যায় এমন সব কাজই আপনার সন্তান করতে পারবে। সন্তানের জন্য কেনাকাটা করলে তাকেও সঙ্গে নিতে চেষ্টা করুন। কেনার সময় তার মতামতকে গুরুত্ব দিন।
খোঁজখবর নিন :
দুপুরে সে কোথায় আছে, খেয়েছে কি না ইত্যাদি ফোন করে জানুন। আবার অকারণে ফোন করবেন না। তাহলে সে ধরে নেবে তাকে পাহারা দিচ্ছেন। সন্তানকে নিয়ে কিছু দিন পর পর কোথাও ঘুরতে যান। তার সঙ্গে মেশার সবচেয়ে ভালো উপায় এটি। বেড়াতে বেড়াতে গল্প করুন, তাকে বিভিন্ন বিষয় শেখান। সন্তানের জন্মদিনে বা যেকোনো দিবসে তাকে উপহার দিন। কাছের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বাসায় অনুষ্ঠান করুন। সন্তান মানসিক কোনো সমস্যায় পড়লে বুঝতে চেষ্টা করুন। সরাসরি জিজ্ঞেস না করে বুঝে নিন।
সন্তানকে সময় দিন :
সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে সন্তানের জন্য তেমন সময় হয়তোবা থাকে না। এমন পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু সময় না দিলে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। সন্তান বিপথে চলে যাওয়ার ভয়ও থাকে। তাই ব্যস্ত থাকলেও সন্তানকে সময় দিন। সন্তানের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী সময় ভাগ করে নিন। সন্তানের দরকারী কাজগুলো কখন করবেন তার রুটিন করুন। সন্তানের সঙ্গে সকালের নাস্তা ও রাতের খাবার খেতে চেষ্টা করুন। তার কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চান। থাকলে সমাধান করুন। বাসায় ফেরার পর একসঙ্গে বসে টিভি দেখুন বা বই পড়ুন। সন্তান শিক্ষার্থী হলে ঠিক করে নিন কতক্ষণ সে আপনাকে সময় দিতে পারবে।
সন্তানের বন্ধু হয়ে যান :
সন্তান ও তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে মাঝে মাঝে বাসায় গেট টুগেদারের আয়োজন করুন। এতে সে সামাজিকতা শিখবে। আর আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান কার সঙ্গে মিশছে। ছুটির দিনটি বাসায় কাটানোর চেষ্টা করুন। সন্তান যখন বুঝবে সপ্তাহের একটি দিনে আপনাকে বাসায় পাওয়া যাবে তখন তার সব প্রয়োজন ও চাহিদা সে ওই দিনের জন্য রেখে দেবে।