বেড়েই চলেছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দাম। তেল, চিনি, চাল, ডাল, মাছ, মাংস, দেশি-বিদেশি মুরগি, ডিমসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা গত সপ্তাহে চাল, চিনি ও মুরগির দাম নিয়ে আলাদা করে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও এবার সব ধরনের পণ্যের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্রেতারা বলছেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজই করছে না।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে গ্রাহকরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মুরগির দাম নিয়ে। গত সপ্তাহে যেখানে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৩০ আজ তা ১৫০ টাকা, পাকিস্তানি সোনালি মুরগি গত সপ্তাহে ছিল ২৬০, এই সপ্তাহে ২৮০ টাকা হয়েছে। এছাড়া দেশি মুরগি গত সপ্তাহের মতো আজও ৫০০ টাকা করে বিক্রি চলছে। এছাড়া লেয়ার ২৪০ টাকা, হাঁস প্রতি পিস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কবুতর ১৩০ টাকা হয়েছে। মুরগির ডিমের হালি গত সপ্তাহে যেখানে ৩৫ টাকা আজ তা ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।
কেন মুরগির দাম বাড়ছে—জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আমিন ভূঁইয়া বলেন, মুরগির দাম আরও বাড়বে, একই সঙ্গে ডিমের দামও বাড়বে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগে যেভাবে মুরগি আসত এখন সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
রাবেয়া খাতুন নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর আগে তেল, চিনি, চালের দাম বেড়েছে। আজকে বাজারে এসে দেখলাম ডিম, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। মনে হচ্ছে বাজারের কোনো অভিভাবক নেই। যে যেভাবে ইচ্ছে দাম বাড়াচ্ছে।
সুমন নামে এক ক্রেতা জানান, কে শোনে কার কথা? সরকার জনগণের কথা শোনে না, জনগণও সরকারে কথা শোনে না। আপনার এত নিউজ করেন দাম বাড়তি নিয়ে, কিছু হয়? আমরাও প্রতিবাদ করছি, আপনারাও লিখছেন। কিছুই হবে না।
এদিকে সরকার মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়।
বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, নতুন সরবরাহকৃত পণ্য এখনো বাজারে না আসায় কমেনি দাম।
এদিকে সব ধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা এবং স্বর্ণা ৪৮ টাকা।
তেলও বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। রূপচাঁদা সয়াবিন ৫ লিটার ৬৮০, বসুন্ধরা ৬৬০, পুষ্টি ৬৬০, তীর ৬৮০, পামওয়েল কেজি ১২০, সরিষার তেল ৫ লিটার ৯২০ টাকা।
মসুর ডাল ভারতীয় কেজি ৭৭, দেশি ৯৫, বুটের ডাল ৭০, মুগ ডাল ১২৫ টাকা। আটা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম আগের মতোই। দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০, আলু কেজিতে ২০, রসুন কেজিতে ১২০, চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১১০ টাকা, চীনা রসুন কেজিতে ১০০ টাকা এবং দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
মাছের দামের মধ্যে ইলিশ প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০, রুই ৩৫০-৩৮০, সাগরের রুই ১ হাজার, পাঙাশ ১১০-১৩০ টাকা।
এদিকে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। সবজির দাম আরও কমবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। শসার কেজি ৩৫-৪০ টাকা, বরবটি ৭০, গাজর ৮০, টমেটো ৭০-৮০, লাউ প্রতি পিস ৩০-৫০, কাঁচা মরিচ ৮০, পটোল ৩০, আলু ২০, করলা ২০, লেবু হালি ১০, ধুন্দল ৩০, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৩৫, শিম ১২০, কাঁকরোল ৪০, কচুর মুখী ৩০, বেগুন ৫০, মুলা ৩৫, ঝিঙে ৮০, চিচিঙা ৪০, কুমড়া ৩০-৪০, চাল কুমড়া প্রতিটি ৪০, লাউ প্রতিটি ৪০, ফুলকপি ২৫ এবং বাঁধাকপি ৩০ টাকা।