স্টাফ রিপোর্টার:
প্রকৃতির নিয়মে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো, বাংলা সন ১৪২২। বসন্ত শেষে প্রকৃতিতে ছোঁয়া লেগেছে গ্রীষ্মের। রোদের তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে আরো একটি বছর। নতুন বাংলা বছর ১৪২৩কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই। মানুষ ভালো থাকুক আর মন্দ থাকুক নববর্ষের দিনটি তাদের ভালো কাটুক এটাই প্রত্যাশা সবার। এবার দুই নিয়মে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন থাকছে না। ২০১৬ ইংরেজি মাসের ফেব্রুয়ারি মাস লীপ ইয়ার হিসেব মতে একদিন বেড়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে এবং ব্যবসায়ীরা এবার একই দিনে ১৪২৩ বাংলা সনের পহেলা বৈশাখ পালন করবে। গত তিন বছর যাবৎ দুই বাংলার পঞ্জিকার হিসাব মতে, শুভ নববর্ষ দুই দিনে উদ্যাপন হয়েছে। সরকারিভাবে একদিন আগে এবং ব্যবসায়ীরা একদিন পরে পহেলা বৈশাখ পালন করেছিলো। এবার সবাই একই দিনে উৎসবে মেতে উঠবে। বিভাজন আর থাকছে না।
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের শহর, গ্রাম আর শহরতলীতে প্রকৃতি তার আপন বৈশাখী রূপে সেজেছে। সবাই নিজ নিজ ভাবনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে কীভাবে বরণ করবে পহেলা বৈশাখকে। তাই চারদিকে ব্যাপক তোড়জোর। বাঙালিয়ানা আর ঐতিহ্যের আহ্বান থেকে চিরচেনা আনন্দকে কীভাবে নববর্ষ বরণ করবে তার পরিকল্পনাও নিয়ে রেখেছেন।
জানা যায়, কৃষি কাজের সুবিধার্থে বাংলা সন প্রবর্তন পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়। কাল কাঙ্ক্ষিত সেই শুভ বাংলা নববর্ষ। চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা জানালেন, ব্যবসায় ভালো যায়নি এ বছর। সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষের নববর্ষ নিয়ে তেমন ভাবনা নেই। তবুও কপালে যা জুটবে তা নিয়েই নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে সন্তুষ্ট থাকতে চান তারা।
সরজমিনে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষ বাংলা নববর্ষ নিয়ে তেমন ভাবছে না। চিরাচরিত নিয়মে পহেলা বৈশাখের দিনটি কাটাতে চায় তারা। তবুও অনেক উৎসবপ্রিয় মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন নববর্ষের বর্ণাঢ্য উচ্ছ্বাসময় উৎসবের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে। দোকান/গদিঘর, মিল-ফ্যাক্টরী ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিচ্ছে। অতীতের গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন প্রভাতে বাণিজ্য সম্পদে আবার ফুটে উঠুক সকলের মুখে আনন্দের হাসি। এমনটা কামনা করে পুরাতন হিসাব চুকিয়ে শুভ হালখাতা করা নিয়ে ব্যস্ত সকল স্তরের ব্যবসায়ী সমাজ। মিষ্টি দোকানিরা ব্যস্ত জিলাপি, দই-মিষ্টি বানানোর কাজে। মাছ ব্যবসায়ীরা বছরের প্রথম দিনের জন্য রুই-কাতল, ইলিশসহ অাঁইশযুক্ত মাছ আগে ভাগে সংগ্রহ করে রাখছেন বিত্তবানদের কাছে বিক্রির জন্যে। খই-মুড়ির পাইকারি ও খুচরা বাজারও সরগরম। পোশাক ও কসমেটিকস এবং শাড়ি-লুঙ্গির দোকানগুলোর বেচা বিক্রি নববর্ষ উপলক্ষে বেড়েছে। শহরে বিভিন্ন মার্কেটে চলছে নববর্ষের কেনাকাটা। পহেলা বৈশাখে নারীর কাছে নতুন ডিজাইনের শাড়ি এবং পুরুষদের পছন্দ উৎসবের পাঞ্জাবি-পায়জামা ও ফতুয়া। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরও মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তারা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মহাজনরা খুশি মনে তাদের শ্রমিক কর্মচারীদের পাঞ্জাবি-লুঙ্গি, গামছা এমনকি বউয়ের জন্য শাড়িও উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। নববর্ষের দিনটিতে সবাই ভালো থাকতে চেষ্টা করেন। এই উৎসবকে ঘিরে পাড়া-মহল্লার ছেলে-মেয়েরা আনন্দে মেতে উঠে। বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলাও বসে। পুরাণবাজার কাঁচ ঘরের হারু বণিক ও গোয়াল পট্টির জগবন্ধু সাহার কর্মচারীরা জানায়, নতুন বছরের নবযুগ ও লোকনাথ ডাইরেক্ট পঞ্জিকা এসে গেছে। তারা বিক্রিও করছে। জগবন্ধু সাহা দোকানের পরিচালক প্রবীর সাহা জানান, নতুন বছরের হিসাব খোলার জন্য সব ধরনের হালখাতা তারা বিক্রি করছে। এবারই সূচিপত্র ছাপা এবং রোলকরা কাগজের হিসাব খাতা এনেছেন। ওয়ান মিনিট, কৃষ্ট ক্যাফে, মিষ্টিমেলা, খায়ের মুন্সি, সুইট হোম, সুনন্দা কেবিন, দুলাল সুইটস, ক্যাফে স্টার, মৌসুমী সুইটস, শ্রী কৃষ্ণের সুরুচী, জনতা, করুণা, মুসলিম সুইটস, মনোরঞ্জন সাহাসহ অন্যান্য মিষ্টির দোকানের কারিগররা ব্যস্ত দই-মিষ্টি ও কালাইর জিলাপি তৈরিতে।
পুরাণবাজার বাতাসাপট্টির মুদি পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী সুখরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক লিটন রায় জানান, আগের নিয়ম অনুযায়ী শুভ নববর্ষ হবে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন শ্রী শ্রী গণেশ পূজা দিয়ে নতুন হিসাব খোলা হয়। স্টেশনারি ব্যবসায়ী নারায়ণ স্টোরের পরিচালক গোবিন্দ সাহা বলেন, আর এক দিন বাকি, লোকাল লেনদেন এসে পড়বে। এবার ব্যবসা কম হয়েছে, কিনলেই লোকসান। টানাটানির মধ্যে ব্যবসা করতে হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাইকারি ব্যবসায়ী সহদেব সাহার পরিচালক টিটু সাহা ও বিপ্লব সাহা জানান, পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় ব্যবসায়ীরা সীমিত লাভ করে। এ প্রতিষ্ঠানের হিসাব লেখক যাকে সরকার বলা হয় গোবরধন পোদ্দার বলেন, পহেলা বৈশাখে পুরানো টাকা দিয়ে নতুন পণ্য নেয়। এখন পাওনা টাকা আদায়ের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। মেসার্স বেঙ্গল ট্রেডিংয়ের পরিচালক গোপাল সাহা জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে এখন মানুষ বকেয়া কম নেয়। অল্প লাভে নগদ বিক্রি হয় বেশি। মিনারা ট্রেডার্সের মালিক হাজী সফিউল্লা পাটওয়ারী স্বপন বলেন, এবার ব্যবসা খুবই খারাপ যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান চাল আমদানি, দেশে প্রচুর ধান উৎপাদন এবং সরকারিভাবে চাল দেয়ায় আমরা চাল ব্যবসায়ীরা সুবিধায় নেই। চাল ব্যবসার মন্দার কারণে এবার লেনদেনও খারাপ যাচ্ছে। তবুও বছরের প্রথম দিন দোয়া ও মিলাদ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছর ভালো যাবে সেই আশায় ব্যবসার কাজ শুরু করবেন।