রাজধানীর বাইরের একটি জেলা স্কুলে ভর্তির আবেদন করেন তূর্য (ছদ্মনাম)। ওই স্কুলের লটারিতে ‘ডে শিফটে’ ৫ বার ও ‘মর্নিং শিফটে’ একবারসহ মোট ছয়বার নাম ওঠে তার। আবার রাহুল (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণির ভর্তির জন্য রাজধানীর দুটি সরকারি স্কুলে আবেদন করেছিল; একটিতেও নাম ওঠেনি।
সারাদেশে সরকারি স্কুলে ১ম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির লটারির ‘ড্র’ হয় গত বৃহস্পতিবার। এতে স্বাভাবিকভাবেই অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ মেলেনি। আবার তূর্যের মতো অনেক শিক্ষার্থীর নাম একাধিকবার লটারিতে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর ভর্তির লটারি। বেসরকারিতে সারাদেশে আসন আছে প্রায় ৯ লাখ ৪০ হাজার। লটারিতে অংশ নিচ্ছে ২ হাজার ৯০৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে ‘ম্যানুয়াল’ লটারিতে শিক্ষার্থী বাছাই হবে। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে সরকারি স্কুলে ভর্তির চাহিদা অনেক, কিন্তু আসন সীমিত। সরকারি স্কুলে ইচ্ছে করলেই শতশত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায় না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৪০৫টি সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শূন্য আসন রয়েছে মাত্র ৮০ হাজার ১৭টি। এসব স্কুলে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন পড়েছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৭৪৬টি।
গুলশান কাঁলাচাদপুর সরকারি স্কুলে লটারিতে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা শাহেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘সরকারি স্কুল যখন পাড়া-মহল্লায় হবে, তখন লটারিতে ভর্তির সুযোগ চালু করতে পারত। হয়তো অনেক থানায় সরকারি স্কুলই নেই। রাজধানীর একটি থানার যে আয়তন, ইচ্ছে করলেই সন্তানকে বাসার কাছের স্কুলে ভর্তি করানো যায় না। আমার ছেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিলে নিশ্চয়ই ভালো ফল করত। আমাকে ভর্তির জন্য উদ্বিগ্ন হতে হতো না। এখন বেসরকারি স্কুলের লটারির জন্য অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।’
ফার্মগেট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে সন্তানের ভর্তির সুযোগ না হওয়ায় অভিভাবক শায়েলা বেগম জানান, ‘প্রথম শ্রেণির পর সব স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার নিয়মই ভালো ছিল। এখন লটারি হওয়ায় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এটি মেনে নিতে পারছি না।’
প্রতিবছর স্কুলে ভর্তি নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা জটিলতা হয়ে থাকে। ভর্তির নামে কোচিং বাণিজ্য, তদবির ও বিভিন্ন রকমের অনিয়ম বন্ধ করতেই লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বছর মহানগর এবং সব জেলাপর্যায়ের স্কুল অনলাইনে যুক্ত হয়েছিল। তবে উপজেলা পর্যায়ের কিছু স্কুল অনলাইনে যুক্ত না থাকলেও তাদের ‘ম্যানুয়াল’ লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা প্রশাসন।
সরকারি স্কুলের ভর্তির চাহিদা সম্পর্কে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল জাতীয়করণ করছে। এর বাইরেও ঢাকা শহরের আশপাশে আরও ১০টি সরকারি স্কুল স্থাপনের কাজ চলছে। বিভাগীয় শহরে সরকারি স্কুল করা হচ্ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সরকারি স্কুলের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। আমাদের চাহিদাও অনেক। সরকারি স্কুলে আবার ইচ্ছে করলেই শত শত শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া যায় না। একটা মানদ-ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হয়। প্রতি ক্লাসে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী নেওয়া হয় সরকারি স্কুলে। আশা করছি, সরকার যে পদ্ধতিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু করেছে, তাতে করে আগামীতে সব ধরনের স্কুলের পড়ালেখার মান বাড়ানোর প্রতিযোগিতা হবে। তখন আর কেউ বলবে না যে অমুক স্কুল খারাপ, অমুক স্কুল ভালো।’