চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রী হয়রানি, সিএনজি অটোরিক্সর ড্রাইভার ও কুলিদের উৎপাত, মাদক, চাঁদাবাজি, লঞ্চে অসামাজিক কার্যকলাপ ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। এসব অপরাধ থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ও নদী বন্দরকে মুক্ত রাখার জন্য অভিযান শুরুর প্রাক্কালে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা গতকাল সোমবার বেলা বারোটার সময় চাঁদপুর নৌ থানা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা পুলিশ ও সদর মডেল থানা এই সভার আয়োজন করে।
জেলা-থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ডিবি পুলিশ, বিআইডবিস্নউটিএ, কমিউনিটি পুলিশিং কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সিএনজি অটোরিকশা মালিক চালক সমিতি, ঘাট ইজারাদার, ঘাট লেবারদের নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সভাটি করা হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সি্নগ্ধা সরকার।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছি। চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রী হয়রানি বা কোনোরকম চাঁদাবাজি কাউকে করতে দেয়া হবে না। আমরা সার্বিক অভিযান করবো। যাত্রী হয়রানির ব্যাপারে বলেন, কিশোর গ্যাং, মাদক, লঞ্চে অসামাজিক কার্যকলাপ, সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক চালকদের উৎপাত, টার্মিনালের জায়গা দখল করে অবৈধ দোকানপাট থেকে লঞ্চ ঘাট এবং নদীবন্দরকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি বিষয়ে অভিযান শুরু করব। আগামী সাতদিনের মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা হবে। রোববার থেকে সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের উপর এ ব্যাপারে অভিযান শুরু করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নৌ-পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিন, জেলা বন্দর কর্মকর্তা একেএম কায়সারুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম ও নৌ-টার্মিনালের টিআই শাহআলম।
সভায় সকলের মতামত, অভিযোগ এবং প্রস্তাবনার ভিত্তিতে লঞ্চঘাটে সার্বিক শৃঙ্খলা আনতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : লঞ্চঘাটে মালামালের টোল আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটা পণ্যের ধার্যকৃত টোলের মূল্য একাধিক দৃশ্যমান স্থানে তালিকা সাঁটিয়ে রাখতে হবে। যাত্রীদের বহন করা বাণিজ্যিক মালামাল ব্যতীত নিজে বহন করা মালামালের উপর টোল নেয়া যাবে না। ঘাটে প্রবেশ করা সকল সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের নির্দিষ্ট আলাদা পোশাক পরতে হবে। যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করা যাবে না।
অপ্রাপ্ত বয়সের কাউকে চালকের আসনে বসানো যাবে না। ঘাট থেকে বের হবার সময় প্রতিটা সিএনজি অটোরিকশার নাম্বার লিখে রাখতে হবে। লঞ্চঘাটে ইজারদার কর্তৃক নিয়োগকৃত লেবারদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কিছু দালাল ঘাটে দাঁড়িয়ে যাত্রীর সাথে ভাড়া দরদাম করা বন্ধ করতে হবে। এই দালাল চক্র এবং বাইরের চালকরা ছিনতাই ও পকেটমারার সাথে সম্পৃক্ত। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরো বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো যাত্রী হয়রানি রোধ করা। লঞ্চঘাটের শৃঙ্খলা আনতে আমরা এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকবেই, সেদিকে না তাকিয়ে নিজ নিজ দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করলেই সমস্যা কমে আসবে। এখন থেকে কোনো সিএনজি অটোরিকশা চালক তাদের নির্ধারিত পোশাক ছাড়া টার্মিনালে প্রবেশ করতে পারবে না। কোনো সিএনজি অটোরিকশা চালক গ্যাংওয়ে বা পন্টুনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। যাত্রীদের ডাকাডাকি, ব্যাগপত্র নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া একেবারে বন্ধ থাকবে।
তিনি আরো বলেন, লঞ্চঘাটে যান চলাচলের ক্ষেত্রে বাহির এবং প্রবেশের দুটি পথ স্থায়ীভাবে ওয়ানওয়ে বা আলাদা ভাবে ব্যবহৃত হবে। আজকের সভায় যে সকল সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ৭দিন পর অর্থাৎ রোববার থেকে আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি আলম পলাশ, ৭নং ওয়াার্ড কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি শাহআলম মলি্লক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম রেজা, সাংবাদিক মিজানুর রহমান, সিএনজি অটো রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী ওমর ফারুক, সদর উপজেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি জোবায়ের হোসেন নয়ন, লঞ্চঘাট লেবার ইজারদার হাজী আঃ মালেক বেপারী, মতলব দঃ ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবির, সিএনজি চালক সফিক গাজী প্রমুখ।
ডিবি পুলিশের এসআই অনুপ চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী, নৌ, থানা, ট্রাফিক পুলিশ, বিআইডবিস্নটিএর লঞ্চঘাট সংশ্লিষ্টরা এবং গাড়ির চালক ও অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।