আগামী রবিবার উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। আমরা যারা কোরবানির পশু ক্রয় করতে হাটে যাই, তাদের বেশির ভাগেরই পশু পছন্দ বা বাছাই করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আবার থাকলেও খুব কম। তাই পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় আগে থেকে জানা থাকলে এক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি কম হবে। পাশাপাশি একটি উৎকৃষ্টমানের পশু ক্রয় করাও সম্ভব হবে। এ ছাড়া এ সময় আরেকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তা হলো- করোনা সংক্রমণের ফের ঊর্ধ্বগতি। কারণ মাঝে করোনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই হাটে গেলে অবশ্যই মুখে মাস্ক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বয়স্করা যদি এ বছরও হাটে না যান। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের করোনার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া অনলাইনে গরু কেনাবেচা বেশ জমে উঠেছে এবার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পোর্টাল বা প্ল্যাটফরম অনলাইনে গরু কেনাবেচায় নজর কেড়েছে। সরাসরি হাট কিংবা অনলাইন যেখান থেকেই কোরবানির গরু কেনা হোক না কেন এ বিষয়ে আমাদের একটু যত্নবান হতে হবে। কারণ কোরবানিতে বেশির ভাগ মানুষই চর্বিযুক্ত নাদুস-নুদুস পশু নির্বাচন করে থাকেন, যা একটি ভুল ধারণা বা আমরা ব্যাপারটা এতটা তলিয়ে কখনো ভাবিনি। স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, পশুর চর্বি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে হƒদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। পশুর চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকায় তা হƒৎপিন্ডে ব্লক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এত সব বিবেচনা করলে কম চর্বিসম্পন্ন পশু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন, হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা পশুর মাংস খেলে ব্রেস্ট, কোলন এবং ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও মোটাতাজাকরণের জন্য স্বীকৃত স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু গরুকে দ্রুত মোটা ওজনদার করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই খামারিরা (কোনো কোনো খামারি) অনৈতিকভাবে স্টেরয়েডসহ বেশ কিছু হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের মতে, বেশি ওজন মানেই বেশি মাংস; বেশি মাংস মানেই বেশি লাভ। গবেষকরা বলছেন, হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা এসব পশুর মাংস খেলে মানুষের ব্রেস্ট, কোলন, প্রোস্টেট এবং ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত, গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত দুই থেকে আড়াই কেজি ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ ধরনের মিকশ্চার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা। টানা ৮ দিন কোনো পাত্রে এ মিকশ্চার মুখবন্ধ অবস্থায় রাখার পর, তা রোদে শুকিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। একটানা ছয় মাস এটা খাওয়ালে গরু খুব দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। কিন্তু আরও দ্রুত এবং আরও বেশি মোটা করার আশায় খামারিরা প্রয়োগ করে থাকে স্টেরয়েডসহ আরও কিছু হরমোন এবং মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া। তাই গরু কেনার সময় এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
সুস্থ গরু চেনার উপায় : ১. অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মোটাতাজা করে হাটে নিয়ে আসেন। এসব গরু অন্যসব গরুর চেয়ে অপ্রত্যাশিত ফোলা থাকে। লক্ষ্য করুণ আপনার পছন্দের গরু চটপটে কি না? কারণ, স্টেরয়েড খাওয়ালে গরু নড়াচড়ার বদলে ঝিম মেরে থাকবে। এ ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ঊরুতে প্রচুর মাংস থাকে। ২. শিং ভাঙা, লেজ কাটা, জিহ্বা, ক্ষুর, মুখ, গোড়ালি খত আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিতে হবে। ৩. সুস্থ গরু চিনতে হলে পাঁজরের হাড়েও খেয়াল করতে হবে। সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড়ে উঁচু নিচু থাকে এবং চোখে নড়াচড়া করবে। ৪. গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। এ ছাড়া গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় তাহলেও বোঝা যায় গরুটি সুস্থ কারণ অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না। ৫. গরুর কুঁজ মোটা ও টানটান থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ। ৬. গরুর পাঁজরের হাড়ে যে তিন কোনা গর্ত থাকে যাকে ফ্লায়েন্ট জয়েন্ট বলে। তাতে কোনা রয়েছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে।