সৌদি আরবে পাড়ি জমানো নারীশ্রমিকদের অনেকে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে বকেয়া বেতন আদায় প্রসঙ্গে সম্প্রতি রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে সৌদিফেরত কর্মী মোছা: সানজিদার বকেয়া বেতন আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে কাউন্সেলর (শ্রম) বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। শুধু সানজিদা নন, তার মতো অনেকেই দেশটিতে গিয়ে ন্যায্য বেতন না পাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত বলেও অভিযোগ রয়েছে।
২৯ জুলাই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (উপসচিব) আরিফ আহমেদ খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ৯৩ লালবাগ, ঢাকার বাসিন্দা, লোকমান মিয়ার মেয়ে মোছা: সানজিদা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ছাড়পত্র নিয়ে গৃহকর্মীর ভিসায় ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব যান। সেখানে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে পালিয়ে আরেকজন নিয়োগকর্তা আব্দুর রহমানের অধীনে ১৫০০ রিয়াল বেতনে কাজ শুরু করেন। যার ঠিকানা হচ্ছে রিয়াদের আল রাবওয়া। কিছুদিন কাজ করার পর ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে কয়েক দিন থাকার পর ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই রিয়াদের ওই একই মালিকের বাসায় ১৫০০ রিয়াল বেতনে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এবার মালিক তাকে ১৫০০ রিয়াল বেতন না দিয়ে ৯০০ রিয়াল বেতন দেয়া শুরু করে। মালিক তাকে জানায়, দেশে ফিরে যাওয়ার সময় তার প্রতি মাসের বকেয়া ৬০০ রিয়াল করে দুই বছরের মোট ১৪ হাজার ৪০০ রিয়াল পরিশোধ করবে। কিন্তু দেশে ফেরার সময় গৃহকর্তা সানজিদাকে ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতন পরিশোধ করেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার মোছা: সানজিদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি বকেয়া বেতনের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এসেছি। কিন্তু সেখান থেকে আজিজ স্যার আমাকে এখনো কিছু জানাননি।’ সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের বেতন সর্বোচ্চ ১০০০ রিয়াল করে। আপনি ১৫০০ রিয়াল করে দাবি করছেন কেন জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, সৌদি আরবের ম্যাডাম ইসমাতের স্বামীর সাথে মাসিক ১৫০০ রিয়ালের চুক্তির পরই আমি সেখানে যেতে আগ্রহী হই। কারণ ওই সময় কাজের লোকের অভাব ছিল। ম্যাডাম অনুরোধ করে আমাকে নিয়ে গেছে।
তিনি এয়ারপোর্টেও এসেছেন আমাকে নিতে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুই বছরের কাজ শেষ হওয়ার পর দেশে ফেরার সময় মালিক আমাকে ১৫০০ রিয়াল বেতন থেকে মোট ২১ হাজার ১০০ রিয়াল দিয়েছে। আর বলেছে বাকি টাকা তোমার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কিন্তু সেই টাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পাঠায়নি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু আমি না, অনেক নারীকর্মী সৌদি আরবে বেতন না পাওয়া ছাড়াও নির্যাতনের শিকার হওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। তবে আমার মালিক এবং ম্যাডাম অনেক ভালো ছিলেন। ম্যাডাম আমাকে সালাম দিতেন। তার ছেলেমেয়েরা আমাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। ম্যাডামও আদর করত। আমিও তাদের আট ছেলে মেয়েকে মায়া করতাম। কিন্তু তাদের এই মায়া যে ওপরে ওপরে তা বুঝতে পারিনি। আপনি আবার সৌদি আরবে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না না, আমি আর সৌদি আরব যাবো না। যদি যাই তাহলে অস্ট্রেলিয়া আমেরিকার মতো দেশে যাবো।
গতকাল জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান আল আব্বাস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও অভিবাসন বিশ্লেষক মুজিবুর রহমান মুরাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় যেটা দেখেছি সেটি হচ্ছে সৌদি আরবে যেসব নারীকর্মী যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বেতন এখন সর্বোচ্চ ১০০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে পুরনোদের জন্য ১০০০ আর নতুন নারীকর্মীদের ৮০০ রিয়াল বেতন দেয়া হতো। নতুন করে সবার বেতন আবার ১০০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক মালিক হতে পারে ভালো কাজের জন্য তার কর্মীদের খুশি হয়ে ২০০ রিয়াল বেতন করে বাড়িয়ে দেন। কিন্তু ১৫০০ রিয়াল বেতন পাওয়ার কথা আমার জানা নেই।