প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকেই খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুরুতে এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ছয় দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। এ ছাড়া প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন আসবে। শুরুর দিকে ক্লাস হবে চার-পাঁচ পিরিয়ড। তবে শ্রেণিকক্ষে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধই থাকছে।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান শিক্ষামন্ত্রী।
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এবার আমরা দেখছি সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে। অভিজ্ঞতা বলছে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সংক্রমণের হার কম থাকে। আর টিকা কার্যক্রম যে গতিতে চলছে সে বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করব। শুরুতে এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের ছয় দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। শুরুর দিন (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে চার-পাঁচ পিরিয়ড ক্লাস হবে। অন্যান্য শ্রেণি এক দিন করে আসবে। তবে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তো খুব বেশি ক্লাস পাবে না। তাদের ক্লাস শেষ হলে অন্যরা বেশি ক্লাসের সুযোগ পাবে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে ঢুকতে হবে। ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, তবে স্কুলে আপাতত কোনো অ্যাসেম্বলি হবে না। শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে বসাতে হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবার মাস্ক পরতে হবে। একেবারে কম বয়সী যারা, তাদের কোনো সংকট হচ্ছে কি না তা শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের মুখে মাস্ক পরিয়ে ক্লাসে পাঠাবেন।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে সে সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। অভিভাবকরা যখন তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন, তখন তার পরিবারের কেউ কিংবা শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ নেই তা নিশ্চিত করবেন। তাঁর সন্তানের মাধ্যমে যেন অন্য কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে তখন করোনা সম্পর্কিত যত ধরনের গাইডলাইন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) যা যা হালনাগাদ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে শিক্ষক ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিনের শারীরিক তাপমাত্রা মাপা, কারো কোনো উপসর্গ আছে কি না তা পরীক্ষা করা এবং শ্রেণিকক্ষে সবার মুখে মাস্ক পরা আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করবেন।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত মাসে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা দিয়ে দুই সপ্তাহ পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন মধ্য অক্টোবরের পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় উপাচার্যদের সঙ্গে শিগগির বসব। তাঁরা অক্টোবরের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য প্রস্তুত আছেন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে। তাই তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা আলোচনা করব।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া থাকবে। যদি মনে করি পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব, তাহলে আমরা পরীক্ষাগুলো নেব। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা যদি আমরা নিতে পারি, তাহলে অন্য পরীক্ষাও আমরা নেওয়ার চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘১২ প্লাস যারা তাদেরও টিকার আওতায় আনার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে। তবে ১২ প্লাসদের সব টিকা দেওয়া যায় না। তাদের জন্য বিশেষ টিকা লাগবে। সেগুলো কিছু এসেছে, আরো আসবে। পর্যায়ক্রমে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে।’
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গেল বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে দফায় দফায় বাড়ানো হয় এই ছুটি। শেষবার আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে। গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী চাঁদপুরে একটি অনুষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকালের আন্ত মন্ত্রণালয় সভায়ও ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।