অর্থ-সম্পদ লোভী এক স্ত্রী তার স্বামীকে নিঃস্ব করে পর পুরুষের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি গত ২৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে হাজীগঞ্জ উপজেলার কলেজ রোডে ঘটে। জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের মুঢ়াগাঁও ভূঁইয়া বাড়ির মৃত শামছুল হকের পুত্র নাজির হোসেন হাজীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণে কলেজ রোডের আরাম কর্টেজে ভাড়া বাসায় উঠেন স্ত্রী মোহছেনা সিদ্দিকাকে নিয়ে। ওই ভাড়া বাসা থেকেই তার স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে নাজির পরিবারের লোকজন জানান, হাজীগঞ্জ উপজেলার বেলঘর পাটোয়ারী বাড়ির মৃত মাওঃ আবু সাদেকের কণ্যা মোহছেনার সাথে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে নাজিরের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে নাফিও (১২) আর নাহিদ (৮) নামে দুই পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের। বিয়ের আগ থেকেই নাজির সৌদি প্রবাসী। ভালোই যাচ্ছিলো তাদের দাম্পত্য জীবন। হঠাৎ তাদের সংসার জুড়ে আসে কাল বৈশাখীর ঝড়। ওই ঝড়ে আজ তছনছ তাদের সংসার। পোয়াবারো স্ত্রী মোহছেনার। অনিশ্চিত জীবনের পথে আদরের দুই সন্তান। স্ত্রীর করাল গ্রাসে আজ তার স্বামী নিঃস্ব। তারা আরও জানান, ছোট ছেলে নাহিদের জন্মের বছর দু’য়েক পর মোহছেনার চলাফেরায় উগ্র ও অশালীন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়। প্রায়ই শ্বশুরালয় থেকে সেজে গোজে কাউকে কিছু না বলে নিজের খেয়াল খুশিতে এদিক-সেদিক চলে যেতো। বিষয়টি আমাদের ভালো লাগেনি বিধায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার রুঢ়
আচরণ প্রবাসে থাকা নাজির পর্যন্ত পৌঁছে। যাকে কেন্দ্র করে নাজির বাধ্য হয় দেশে ফিরে আসতে। শান্তির লক্ষ্যে সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নাজির তার স্ত্রীকে নিয়ে হাজীগঞ্জে ভাড়া বাসায় উঠে। যথারীতি নাজির চলে যায় তার কর্মস্থলে। শুরু হয় মোহছেনার পরকীয় তান্ডবের মহাপ্রলয়। ঘটতে থাকে একের পর এক অসামাজিক ও আপত্তিকর ঘটনা। তার এহেন অপকর্ম বন্ধের লক্ষ্যে দুই পরিবারের পরিজন নিয়ে সামাজিক বৈঠকের আয়োজন করেও তাকে সুধরানো যায়নি। এক পর্যায়ে তার পক্ষ থেকে আসে নানা হুমকি-ধমকি। পরে জানা যায়, মোহছেনা থেকে সুবিধাভোগী একটি মহল তাকে রক্ষা ও নাজির পরিবারকে ধ্বংসের পায়তারায় লিপ্ত। এতো কিছুর পরও নাজির তার সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর সকল অন্যায় অপরাধ ক্ষমাসহ তার আবদার পূরণে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করে। তার নামে সাড়ে ৩৭ শতক জায়গা ও ব্যাংকে ৩৫ লক্ষ টাকা ডিপোজিট করে নাজির হোসেন। এছাড়া নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারে মুড়িয়ে রেখে তার সকল আবদার পূরণ করেছে সে। ২০১৫সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসে নাজির। উন্মোচিত হয় মোহছেনার নতুন নাটকের এক ঘৃনিত অধ্যায়। এবার স্বামীর কাছে তার বায়না-আমার নামে তোমার বাড়িটি লিখে দাও, তবেই আমি সকল অপকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবো। নাজির তার বায়না পূরণে অনীহা প্রকাশ করায় স্ত্রী মোহছেনার লালিত গুন্ডা বাহিনী দ্বারা ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় নাজিরকে। নাজির তার চৌকস বুদ্ধিমত্ত্বায় বন্দী দশা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত নাজির ফিরে আসে তার নিজ বাড়িতে। বাড়ির লোকজন তার কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, আমাকে কে বা কারা অপহরণ করেছে তা আমি প্রথমে জানতে পারিনি। আমার হাত ও চোখ বাধা ছিল। আমি কাউকে চিনতেও পারিনি। চোখ বাধা অবস্থায় আমাকে অপহরণকারীরা জানায়, তোর স্ত্রী মোহছেনা তোকে অপহরণ করে হত্যা করার জন্য আমাদের ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে-তুই তার চেয়ে বেশি দিলে তোকে মুক্ত করে দিবো। আমি তাদের কিছুই বলিনি। এক পর্যায়ে তারা আমাকে চোখ বাধা অবস্থায় বেদম প্রহার শুরু করে। আমি সহ্য করতে না পেরে তাদের ৭ লক্ষ টাকা দিবো বলে স্বীকার করি। এক সময় তাদের নির্যাতন থেকে নিস্তার পাই। তখনই আমি আমাকে মুক্ত করার কৌশল আঁটতে থাকি। প্রস্্রাবের নাম করলে তারা হাতের বাধ খুলে দেয়। ওই সুযোগে চোখের বাধ খুলে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হই। এ খবর আমার স্ত্রী মোহছেনার কাছে পৌঁছলে সে হাজীগঞ্জ থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। যার নং-২৮/২৫৬, তাং-২৮/১২/২০১৫ ইং। ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সৌদি যাওয়ার ফ্লাইট ছিলো আমার। আমি বিমান বন্দরে পৌঁছার পর সেখানেই আমাকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ বিমান বন্দর থানা পুলিশের সহযোগিতায় আটক করে এবং আমার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জব্দ করে। পরদিন আমাকে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে আমাকে শারিরীক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। আমাকে আদালতের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় জেলা কারাগারে। ২৪ দিন কারাভোগের পর ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে স্থায়ী জামিন গ্রহন করি এবং সৌদি যাওয়ার প্রয়োজনীয় জব্দকৃত কাগজপত্র উদ্ধার করে ১৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সৌদি আরব চলে যাই। যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর বাড়ি থেকে আসা ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার স্ত্রী মোহছেনা সিদ্দিকা পরকীয় পুরুষের হাত ধরে দুই সন্তানসহ পালিয়ে যায়। আমার পরিবারের লোকজন তখন থেকে নানা জায়গায় খোঁজ করেও তাদের সন্ধান পায়নি।
‘আরাম কর্টেজ’র কেয়ারটেকার জানায়, আমার বাড়ির মালিক প্রবাসী নাজির হোসেনের কাছে বিল্ডিংয়ের ২য় তলা ভাড়ায় দেয়। ওই থেকে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে এখানেই বসবাস করত। গত ২৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কাউকে কিছু না বলে সকল মালামাল নিয়ে পালিয়ে ভাড়াটিয়া নাজিরের স্ত্রী। কি কারনে কেনো তিনি পালিয়ে গেলেন তা আমার জানা নেই।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, একজন মাওলানার মেয়ে হয়ে যেসকল অসামাজিক কর্মকান্ড সৃষ্টি করেছে তা এ সমাজের জন্য কলংকদায়ক। এ সকল কর্মকান্ডের দায়ে কয়েকবার সামাজিক শালিসের মাধ্যমে মুচলেকাও দিয়েছে। তবুও তার নোংরা মনোষভাবের পরিবর্তন ঘটেনি। এ ধরনের দুঃচরিত্রা নারীর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে আইনের দারস্থ করা উচিৎ বলে তারা মনে করেন।