রহমতপুর আবাসিক এলাকায় হাফিজ উদ্দিনের
মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করল তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকায় হাফিজ উদ্দিনের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আছিয়া বেগম ওরফে নূরজাহান হাফিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার সম্পদ নিজ নামে জাল দলিলের মাধ্যমে লিখে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সম্পদ পরবর্তিতে আছিয়া বেগম ওরফে নূরজাহানের পূর্বের স্বামীর ওরস জাত সন্তকে লিখে দেয়। বিষয়টি নিয়ে রহমতপুর আবাসিক এলাকায় চাঞ্চল্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগকারী মৃত. হাফিজ উদ্দিনের পুত্র মানিক রাজা জানায়, আমার বাবা গত ১৬/০৬/১৯৮০ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ৬৮৯৯নং বন্দবস্ত দলিল মূলে তফছিল বর্ণিত ভূমি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের নিকট হইতে বন্দবস্ত গ্রহণক্রমে উক্ত ভূমির মালিক হয়। আমার বাবা ১৩৮ বর্গ গজ সতাংশের মাপে ০.০২৮৪ একর যাহার হাউজিং এস্টেট এর ১৩৭ নং ফ্লটের ভূমী হয়। যা ১৩৭ নম্বর (চেয়ারম্যান কটেজ) নামে বাসাটি পরিচিত।
তিনি আরো জানান, আমার বাবা জীবদ্দশায় ২টি বিবাহ করেন। তাহার ১ম স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এর গর্ভে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে জন্ম গ্রহণ করে। পরবর্তিতে আমার বাবা হাফিজ উদ্দিন সরকার আমর মা আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান বেগমকে ২য় বিবাহ করেন। বিবাহের সময় আছিয়া খাতুন তার পূর্বের স্বামীর ওরসজাত সন্তান চৌধুর সেলিম আফিজ নামে এক পুত্র সাথে করে নিয়ে আসে। এর কিছুদিন পরে আমার বাবার ওরসে ও আমার মা আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান বেগমের গর্ভে আমি মানিক রাজা জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যু বরণ করলে আমার মা আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান সকলের অগচরে বাবার সম্পত্তিটি জাল দলিলের মাধ্যমে তার নামে লিখে নিয়ে যায়। এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলামনা। যখন জানতে পারি তখন মাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি অস্বিকার করেন। উক্ত বষয়ে আমাদের সন্দেহ জাগলে ওই দলিলটির নকল উঠালে এর সত্যতা প্রমান হয়। আমি বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদেরকে ও পৌর মেয়রকে অবহিত করি। এ বিষয়ে চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মানিক রাজা আরো জানায়, এলাকাবাসী বিষয়টি সম্পর্কে আমার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি আজ নয় কাল বসবে বলে কাল ক্ষেপন করে। এরই মধ্যে উক্ত সম্পত্তিটি তার পূর্বের স্বামীর উরসজাত পূত্র চৌধুরী সেলিম আফিজের নামে লিখে দেয়। আমার বাবার ১ম ঘরের ভাই বোন ও আমাকে উক্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য আমার মা ও সৎ ভাই মিলে এই প্রতরণা মূলক কাজটি করে। আমার সৎ ভাই পূর্ব থেকেই ঢাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছে। কখনই আমার মা’র খোজ খবর নিতো না। আমিও জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে চাঁদপুরে এসে মায়ের খোজ খবর নিতাম এবং ভরণ পোষণ করতাম। গত ১৭/০৫/২০১৭ই তারিখে আমি চাঁদপুর বাসায় আসিয়া দেখি আমার মা বাসায় নেই। আমি আমাদের ভাড়াটিয়া ও আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় আমার মাকে আমার সৎ ভাই চৌধুরী সেলিম আফিজ নিয়ে যায়। যাতে করে আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মাধ্যমে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিটি মা’র কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারি। আমি মাকে না পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় গত ২৯/০৬/২০১৭ইং তারিখে একটি সাধারণ ডায়রী করি। যার নং- ১৩৫।
জানা যায়, চৌধুরী সেলিম আফিজ পূর্ব থেকেই নানা প্রতারণার সাথে জড়িত এবং তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। বর্তমানে সে তার মাকে নিয়ে ঘা ঢাকা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, হাফিজ উদ্দিন ১ম স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে গ্রামের বাড়িতে রেখে ২য় বিবাহ করে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে চাঁদপুর শহরের রহমতপুর আবাসিক এলাকার ১৩৭ নং চেয়ারম্যান কটেজ ভবনে বসবাস করতো। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হলে হাফিজ উদ্দিন ২য় স্ত্রী আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান বেগমকে গত ২৬/০৬/১৯৮৩ইং তারিখে তালাক দেন। এখানে প্রশ্ন জাগে যে, তালাক হওয়ার পরও সে তালাক প্রাপ্ত স্বামীর সম্পত্তিতে রহমতপুর কলোনি চেয়ারম্যান কটেজে কি ভাবে বসবাস করে আসছে। তালাক হওয়ার পরতো আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান বেগম হাফিজ উদ্দিন সরকারের সম্পত্তির ওয়ারিশ বা মালিকদার নয়। তারপরেও আছিয়া খাতুন ওরফে নূরজাহান বেগম হাফিজ উদ্দিন সরকারের মৃত্যুর পর জাল দলিল করে কিভাবে নিজের নামে সম্পত্তি লিখে নেয়। আবার ওই সম্পত্তি তার পূর্বের স্বামীর সন্তান চৌধুরী সেলিম আফিজের নামে লিখে দেয়। এখানে বিদ্যমান হয় যে, তিনি হাফিজ উদ্দিন সরকারের ওরসজাত সকল ছেলে ও মেয়েদের সাথে প্রতারণা করে এ কাজটি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে রহমতপুর আবাসিক এলাকায় চাঞ্চল্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।
ভোক্তভোগী মানিক রাজা ও হাফিজ উদ্দিনের ১ম ঘরের ছেলে মেয়েরা তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠ বিচারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।