চাঁদপুর নিউজ ডেস্ক==
১৮ দলীয় জোটের চলমান ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন চাঁদপুর জেলা বিগত হরতালের তুলনায় শান্ত থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার হরতালের দ্বিতীয় দিন হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকা। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। একইভাবে ফরিদগঞ্জ-রামগঞ্জ সীমানত্দবর্তী এলাকা ফরিদগঞ্জের লতিফগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামাত সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় জায়গায় বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। আহত হয়েছে কমপৰে ৪০ জন।
গতকাল সকালে বহরিয়া বাজারে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মীদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, ব্যানার ফেস্টুন ভাংচুর, দোকানপাট ও বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় দলের ৩০ কর্মী আহত হয়। বিএনপির আহতরা হলেন শাহজাহান গাজী (৩৫), আরিফ (২৫), দেলোয়ার (২৬), হেলাল বেপারী (২৪), রুবেল (২০), জাকির মিজি (২৪), আলাল মল্লিক (২৫), লোকমান গাজী (৩০), সেলিম গাজী (২৫), হাকিম খাঁ (২৩), শাহাদাত শেখ (২২), ইদ্রিস বেপারী (৪৫), রহমান (১৭) ও মনির হোসেন (৩০)। অপরদিকে আওয়ামী লীগের আহতরা হলেন আলমগীর খন্দকার (২৮), সুমন খন্দকার (২৫), সোহেল (৩০), মাসুদ (২৫), বিল্লাল শেখ (৩৫) ও রুবেল (২০)। আহতদের মধ্যে বাবুল শেখ (৫০) ও ওহাব মিজি (৪০) চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জরুরি বিভাগ থেকে জানা যায়। অন্যরা স্থানীয়ভাবে ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় পক্ষকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষের সময় ওয়াপদা রাস্তা, বহরিয়া বাজার ও শ্রীরামপুর গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে হরতালের সমর্থনে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বহরিয়া ব্রিজের গোড়ায় অবস্থান নিয়ে মিছিল করে শ্লোগান দিতে থাকে। অপরদিকে বহরিয়া বাজার ওয়াপদা রাস্তার উপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মিছিল করছিলো। দুই দলের তখন অবস্থান ছিলো মাত্র ৫ গজ দূরত্বে। দুই দলের পৃথক মিছিল ও শ্লোগানকে কেন্দ্র করে প্রথমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, পরে সকাল ১১টায় সংঘর্ষ বেঁধে যায়। আওয়ামী লীগ ওয়াপদা রাস্তায় আর বিএনপি শ্রীরামপুর সড়কের ব্রিজ এবং বহরিয়া বাজারস্থ ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তায় অবস্থান নিয়ে একে অপরের উপর বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন স্থানের কর্মীরা উল্লেখিত এলাকায় জড়ো হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তখন অনেকের হাতে ধারালো দেশীয় বড় বড় অস্ত্র ছিলো। সংঘর্ষ চলাকালে ওয়াপদা রাস্তার উপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যানার, ফেস্টুন ভাংচুর করা হয়। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরু ভূঁইয়ার দোকান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোলেমান মাঝির বসতঘর, রুবেলের ফল দোকান ও জুয়েলের স্টেশনারী দোকানে হামলা হয়।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুল হাসান ভূঁইয়া জানান, অন্যান্য হরতালের মতো তারা নেতা-কর্মী নিয়ে বহরিয়া-শ্রীরামপুর সড়কের ব্রিজের গোড়ায় অবস্থান নেয়। হরতাল ঠেকানোর জন্য চেয়ারম্যান সেলিমের নির্দেশে আওয়ামী লীগের সুমন খাঁ, রুবেল রাড়ী, মনসুর গাজী ও সুমন খন্দকারসহ আরো ক’জন যুবলীগ নেতা সফিক খাঁর দোকান থেকে লাকড়ি নিয়ে বিএনপির মিছিলের উপর প্রথমে নিক্ষেপ করে এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচির উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ১৫ থেকে ২০জন কর্মী আহত হয়। অপরদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা খোকন রাড়ী জানান, তিনি, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরশাদ মিজি, আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু হাজী, যুবলীগ নেতা জহির হাওলাদার ও সফিক খাঁর নেতৃত্বে হরতালের নামে নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মিছিল করার সময় বিএনপির লোকজন তাদের উপর প্রথমে হামলা করে। তিনি দাবি করেন, তাদের ৮-১০জন কর্মী আহত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ নেতা সোলেমান মাঝির বাড়ি ও হুমায়ুন কবির খাঁর ফার্মেসী বিএনপি কর্মীরা কুপিয়ে ব্যাপক ৰতিসাধন করে। প্রত্যক্ষদর্শী চায়ের দোকানদার বাশার ও পান দোকানদার রুহুল আমিন খাঁ জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাছাকাছি ছিলো। হঠাৎ দেখেন চারদিক থেকে ইট আর ইট আসছে। দোকান বন্ধ করার সময় পাই নাই। হোটেলের তেলের কড়াই ফেলে দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ এসে দু’ দিকে ধাওয়া দেয়।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বহরিয়া বাজার ওয়াপদা রাস্তা ও নূরুল ইসলাম হাই স্কুল সড়কের সামনে ইট আর ইট। পুলিশ উভয় পক্ষকে ধাওয়া করে ওয়াপদা রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। পুলিশের বিশেষ স্ট্রাইকিং ফোর্সও সংঘর্ষে লিপ্তদের নিবৃত্ত করতে সেখানে ছিল। কিছু দূরত্বে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি টহল সদস্যদের গাড়ি নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়। দুপুর ১টায় সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিজিবি ও পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স বহরিয়া বাজার থেকে শহরের দিকে চলে যায়। চাঁদপুর মডেল থানার একদল পুলিশ সেখানে পরবর্তীতে মোতায়েন ছিল।
ডিআইও-১ জানান, বহরিয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৮ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বহরিয়া বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে, আতঙ্কে আছে বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ীরা। বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী ও ইউনিয়নের সচেতন জনগণের মতে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের কারণে এই সংঘর্ষ হয়।
এদিকে ফরিদগঞ্জ-রামগঞ্জ থানার সীমানত্দবর্তী এলাকা ফরিদগঞ্জের লতিফগঞ্জ বাজারে গতকাল সকালে আওয়ামী ও বিএনপি-জামাত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রামগঞ্জ থেকে আসা জামাত-শিবিরের বেশ কিছু ক্যাডার সংঘর্ষে অংশ নিয়ে লতিফগঞ্জ বাজারে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা একটি মুরগির খামারে আগুন দেয় এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে।