ফাহিম শাহরিন কৌশিক খান
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নে অবস্থিত চান্দ্রা বাজার ইয়াকুব আলী স্মারক উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবিরের সাথে যোগ সাজসে অনুমোদন বিহীন হলিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের রক্ত পরীক্ষার নামে চাঁদাবাজী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দু’দিন যাবৎ চান্দ্রা বাজার সিদ্দিক শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত হলিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ স্কুল চলাকালীন সময়ে রক্ত পরিক্ষার নামে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা উঠায়। সরজমিনে গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, অনুমোদন বিহীন অবৈধ হলিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ার হোল্ডার ইকবাল হোসেন মিন্টু, মোঃ শামিম আহমেদ, হাফেজ ওমর ফারুক তাদের একজন প্যাথলজির টেকনিশিয়ান তুহিনকে সাথে নিয়ে স্কুল চলাকালীন সময়ে শ্রেণী কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষার নামে নিম্নমানের সিরিজ দিয়ে রক্ত সংগ্রহ করছে। এসময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তাদের রক্ষিত ব্যাগে ডুকাচ্ছে। চাঁদপুর থেকে কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ স্কুল কক্ষ থেকে সব গুটিয়ে বের হয়ে চলে আসে। পরক্ষনে তাদেরকে রক্ত পরীক্ষার জন্য বলার পর তারা পূনরায় ছাত্র-ছাত্রীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রক্ত সংরক্ষন করে। পরে প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবিরকে তার কক্ষে না পেয়ে স্কুল থেকে চলে যাওয়ার সময় রক্ত পরিক্ষার বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক হুমায়ন কবিরের সাথে যোগ সাজসেই স্কুলের প্রায় ১২শ’ ছাত্র-ছাত্রীদের পর্যায়ক্রমে রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত দু’দিনে দেড়’শ জনের অধিক ছাত্র-ছাত্রী রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হয়। তাদের কাছ থেকে খরচ বাবদ ১০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার মূল কারণ গ্লাক্সকো কোঃ শিক্ষার্থীদের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জন্য ভেকসিন প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা হারে প্রদান করবে। ভ্যাকসিন পুশ করার পূর্বে শিক্ষার্থীদের রক্ত পরীক্ষা করা জরুরী বিধায় প্রধান শিক্ষকের সম্মতিক্রমে শিক্ষার্থীদের রক্ত পরিক্ষা করা বাবদ ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে চান্দ্রা ইয়াকুব আলী স্মারক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবিরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা করবে বলে হলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের রক্ত সংগ্রহ করেন। টাকার নেয়ার বিষয়ে অবগত নই। স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে অনেকটা জোড়পূর্বক তারা ১০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। রক্ত পরীক্ষার নামে যেই টাকা তোলা হচ্ছে তা হলিকেয়ার ডায়াগনস্টি সেন্টারের মালিক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ নিজেরাই বন্টন করে নিচ্ছেন।
এছাড়াও চান্দ্রা ইয়াকুব আলী স্মারক উচ্চ বিদ্যালয় বিভিন্ন সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কোচিং, মিলাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে জনপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। কেউ কোচিং বা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করুক বা না করুক টাকা দিতে হবে বাধ্যতামূলক।
চান্দ্রা বাজারের হলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ার হোল্ডার ইকবাল হোসেন মিন্টু মূলত একজন মেডিক্যাল সেলস্ রিপ্রেজেন্টেটিভ। বর্তমানে সে হলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তারি কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইতিপূর্বে দুলাল চন্দ্র নামে এক ডাক্তার এখানে রোগী দেখলেও এখন ওই ডাক্তার নিজস্ব কারণে এখানে আসেন না। তাই এখন ইকবাল হোসেন মিন্টু নিজেই ডাক্তার সেজে রোগী দেখেন এবং রোগীদের সাথে প্রতারণা করে বিরাট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক এক ব্যক্তি জানায়, আমার আত্মীয়কে আমি এখানে আনলে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ্ওষুধ দেয়াসহ তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়। তার ওষুধ খেয়ে রোগী মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরে সাধারণ ফার্মেসী থেকে ওষুধ খাওয়ালেই সে ভালো হয়। পরে ফার্মেসী থেকে জানা যায়, সঠিক রোগের ওষুধ না দিয়ে সে অন্য ওষুধ দিয়েছে টাকার জন্য।
আইয়ুব আলী নামে এক রিক্সাওয়ালা জানায়, আমি গরীব মানুষ এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করাই। তারা আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করলে আমার কাছে না থাকাতে ওই দিন তাদের কক্ষে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে। পরের দিন আমার আত্মীয়রা টাকা নিয়ে আসার পর আমাকে মুক্তি দেয়।
এভাবে প্রতিদিন অসহায় রোগীরা এই প্রতারক ইকবাল হোসেন মিন্টু ও তাদের বাকী শেয়ার হোল্ডারদের কাছে নানাভাবে হয়রানী ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী জনগন এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
শিরোনাম:
রবিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।