প্রতিনিধি
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে হাইমচরের ঢেলেরবাজারে সন্ত্রাসীদের তা-বলীলায় ২ সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ১০ জন। সন্ত্রাসীরা ১০টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে।
হাইমচর থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং আহত সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ১৪ জুলাই বাজাপ্তী আরএম হাইস্কুল মাঠে দু’দল কিশোরের মধ্যকার ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দফায়-দফায় হামলার এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নয়ানী গ্রামের জনৈক হারুন মৃধার ছেলে মোঃ মনির হোসেনের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী দল হাইমচরের ঢেলেরবাজারে এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম বেপারী (৫৫)কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপরে স্থানীয় জনতা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে বাবলু বেপারী (৩০), রুবেল বেপারী (২০), মহসিন (২৫), হারুন শেখ (৩০), কালু মুন্সি (৬০), শিবি্বর খান (৭০), হারুন গাজী (৩৫) সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে এরা হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েচিকিৎসাধীন রয়েছে। বিকেল থেকে সন্ত্রাসী বাহিনীর অস্ত্রের মহড়ার সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাইমচরে কর্মরত সাংবাদিক বিএম ইসমাইল ও মোঃ সাহেদ হোসেন দিপু সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনীর তা-বলীলার মুখোমুখি হন তারা।
এ সময় সাংবাদিকরা ভাংচুরকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও লুটপাটের ছবি তোলতে গেলে সন্ত্রাসীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও জিআই পাইপ দিয়ে সাংবাদিকদের উপর অর্তকিত হামলা চালায়। এতে সাংবাদিক বিএম ইসমাইল ও সাহেদ হোসেন দিপু মারাত্নক আহত হয়। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ব্যবহৃত ডিসকভার মোটরসাইকেলটি ব্যাপক ভাংচুর করে, সাথে থাকা ক্যানন ক্যামেরা, সামসাং গ্রেন্ড টু মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হারুন গাজী, মহসিন দেওয়ান, মান্নান গাজী, শিবি্বর খান, হারুন শেখ, মাঈনুদ্দিন, মেজবা উদ্দিন মিজি, করিম মৃধা, কালু মুন্সি, শাহআলম জানান, স্থানীয় হারুন মৃধার ছেলে মনিরের সহযোগিতায় বাংলা বাজারের সন্ত্রাসী ফরিদ কবিরাজ, মহন কবিরাজ ও বহু মামলার আসামী ইয়াবা সম্রাট আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের দোকানে ভাংচুর, হামলা ও লুটপাট চালিয়ে মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায়। তাদের অস্ত্রের মহড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা লোকজন কেউ সামনে এসে দাঁড়াতে পারেনি। এতে বাজার ব্যবসায়ীদের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
অভিযোগ রয়েছে এ কুখ্যাত চক্রটি ইতিপূর্বে কাটাখালী বাজার ও মাছ ঘাটে, গাজীর বাজার, বাংলা বাজার, নয়ানী ও চান্দ্রা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে অর্তকিত হামলা ও লুটপাট করে। এদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ভয়ে জনগণ অতিষ্ঠ হলেও তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। কারণ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে (বাংলাবাজার চৌরাস্তা) হাইমচরের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ ও হাইমচর-চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় যে কোন অপকর্ম করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। দু-এক জন প্রতিবাদকারী বাংলাবাজার এলাকায় তাদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার নজিরও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে জাল টাকার ব্যবসা, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন এবং বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে বাজার ব্যবসায়ী হারুন ও সাংবাদিক সাহেদ হোসেন দিপু পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে যা তদন্তাধীন রয়েছে। প্রকৃত অপরাধী যে হোক তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।