হাইমচর প্রতিনিধি-
হাইমচর উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে এবং শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করে এক প্রভাবশালী দোকান নির্মাণ করছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রতিবাদকারীরা ঐ প্রভাবশালীর হুমকির মুখে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ নিয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকাবাসী স্কুলের খেলার মাঠ রক্ষা ও শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ।
জানা যায়, হাইমচর উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করে দোকান নির্মাণ করছেন এক প্রভাবশালী। ক্ষমতাধর এ নেতা ইতিপূর্বেও স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে দোকান নির্মাণের চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হন। পার্শ্ববর্তী রায়ের বাজারের সরকারি খাস জমিতে দোকান নির্মাণ করে তা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এ নেতা। ভূমি খেকো হিসেবে পরিচিত এ নেতার রয়েছে একটি পেটুয়া বাহিনী। প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে লেলিয়ে দেন প্রতিবাদকারীদের উপর। তার ভয়ে এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছে না। গত ২৫ সেপ্টেম্বর হতে পুনরায় সদলবলে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর খেলার মাঠ দখল করে দোকান নির্মাণ করেন তিনি। এমনকি পার্শ্ববর্তী শহীদ মিনারটির পবিত্রতাও হুমকির মুখে পড়েছে দোকান নির্মাণের কারণে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নেন নি। এলাকাবাসী থেকে সংবাদ পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ হারুন-অর-রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী মোঃ কামরান হোসেনও নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় প্রতিবাদকারীরা ঐ প্রভাবশালীর হামলার শিকার হতে পারে। এলাকার প্রতিবাদী যুবক ও এলাকাবাসী এর আগে অবৈধ দোকান নির্মাণের প্রতিবাদ করায় হামলা ও মামলার শিকার হয়েছিলেন।
এ সম্পর্কে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মমতাজ ভূঁইয়া জানান, দীর্ঘ ক’ বছর পূর্বে এ নেতা দোকান করেছিলো। কিন্তু তখন আমি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকায় নিজ দায়িত্বে নির্মাণকৃত দোকান ভেঙ্গে দেই। স্কুলে শহীদ মিনার ছিলো না। আমি ও এলাকাবাসী মিলে একটি শহীদ মিনার করে দেই। বর্তমানে ক্ষমতার দাপটে একই লোক শহীদ মিনারটির পবিত্রতা নষ্ট করে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ দখল করে আবারো জোরপূর্বক দোকান নির্মাণ করছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, আমি চাকুরি করতে এসেছি। এ সম্পর্কে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট আমি একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকরা জানান, স্কুলের মাঠে আমাদের সন্তানরা খেলাধুলা করে এবং শহীদ মিনারে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। স্কুলের মাঠ দখল করে দোকান নির্মাণ করায় ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার সমস্যা হবে আর শহীদ মিনারের পবিত্রতাও নষ্ট হবে। আমরা তার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, জনৈক মোতালেব ভূঁইয়া দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ রায়ের বাজারের খাস জমি ক্রয়/বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা তাকে কিছু বলতে পারছি না। বেশ ক’বছর চুপ থাকলেও বর্তমানে আবার স্কুলের মাঠ দখল করে জোরপূর্বক দোকান নির্মাণ করছে। দ্রুতগতি নির্মাণকৃত দোকান ভেঙ্গে খেলার মাঠকে খালি করার জন্যে আমরা প্রশাসনের জরুরি হসত্দক্ষেপ কামনা করছি।