প্রতিনিধি=
হাজীগঞ্জে গত ক’দিনের হরতালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনায় বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের আদালতে এবং পুলিশ বিএনপির বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির এক কর্মী বাদী হয়ে চাঁদপুরের আদালতে আর হাজীগঞ্জ বাজারে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টসহ ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা করে। বিএনপির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশ ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ জনকে আসামী করেছে। এর মধ্যে ১৭জন নামীয় ও বাকিদের অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ বিএনপি কর্মী সিরাজ (২৮) ও আবুল বাসার (২৩)কে আটক করেছে।
১৮ দলীয় জোটের ডাকা গত কয়েক হরতালে হাজীগঞ্জে একাধিকবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া হরতালের আগে ও চলিত বছরে আরো কয়েকটি সংঘর্ষ ঘটে উভয় দলের মধ্যে হাজীগঞ্জ বাজারে। ঐ সকল সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বেশ ক’বার উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়টিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সর্বশেষ গত মাসের শেষ দিকে টানা ৩দিনের হরতালের ২য় দিন সন্ধ্যায় বিএনপির কার্যালয়টি সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেয়া হয়। যা পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এর আগে পাঁচৈ গ্রামে এক আওয়ামী লীগ নেতার বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা। ঐ ৩ দিনের হরতালের প্রথম ২ দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় দলের প্রায় ২৫-৩০ কর্মী আহত হয়। বিএনপির দলীয় কার্যালায় পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় পৌর এলাকার বিএনপির জনৈক কর্মী বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদপুরের আদালতে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নেতাকে আসামী করা হয়।
অপরদিকে হাজীগঞ্জ বাজারে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ ও ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা করে। ওই দিন একই স্থানে একই সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ ডাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উভয় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নিয়ে আপোষ করার চেষ্টা করা হয়। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। উভয় দলের নেতারা সমাবেশ করার সিদ্ধানত্দে অনড় থাকায় বিকেলে ২ দফা উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় দলের প্রায় ২৫ জন আহত হয় এবং ২৫-৩০টি গাড়ি ও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর হয়। দুর্বৃত্তরা রাসত্দার উপর স্থাপিত পৌরসভার সোডিয়াম লাইটগুলো নির্বিচারে ভেঙ্গে ফেলে। ঐদিন রাতেই হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ১৭জন নামীয় এবং ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ জন অজ্ঞাত বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ২। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২ বিএনপি কর্মীকে আটক করে। এ মামলার বাদী হলেন হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান আবুল হোসেন বৃহস্পতিবারের মামলার কথা স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে উভয় দলের সংঘর্ষ থামাতে গেলে বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা ও হাজীগঞ্জ বাজারের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলে। তারা বাজারের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেশকিছু যানবাহনে নির্বিচারে ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। উক্ত মামলার বাদী এস আই আনোয়ার হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আমাদের এ মামলা। আর আসামীদের যথা শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, শান্তি ও মসজিদের শহর হাজীগঞ্জ। উভয় দলের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর মারমুখী আচরণের কারণে জেলার মধ্যে আজ হাজীগঞ্জের বদনাম ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা ব্যবসায়ীরা হরতালের সাথে মারামারির ঘটনায় ক্ষুব্ধ। এ ধরনের ঘটনা ইচ্ছে করলে শীর্ষ নেতারা দমিয়ে রাখতে পারেন। আমরা চাই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশগুলো বাজারের বাইরে কোথাও হোক। তবেই কিছুটা স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবো।