সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ
হাজীগঞ্জ পাইলট হাইস্কুলটি প্রায় শত বৎসর ধরে হাজীগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে এক অনন্য ভুমিকা রেখে চলেছে। এটি ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে পাইলট হাই স্কুলে উন্নীত হয়। কালের আবর্তে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে ১৯৯৭ সালে এ প্রতিষ্ঠানটিতে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শাখার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা শাখা খোলা হয়। হাজীগঞ্জের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে ২০০৪ সালে স্কুলটিকে একাদশ শ্রেণিতে উন্নতি করা হয় এবং প্রধান শিক্ষকের স্থলে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। সে থেকে এটি হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যারা অতীতে লেখা পড়া করে গেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি বছর এসএসসি/বিএম শাখা/ জুনিয়য়ার বৃত্তিসহ সকল বিভাগে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করে চলছে। যা এলাকার জনগণ এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গর্ববোধ করে থাকেন। সুযোগ্য গভর্নিং বডি দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হওয়ায় এটি দিনে দিনে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে হাইস্কুল শাখায় ২২জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ১ হাজার ৬শ’ শিক্ষার্থী, বিএম শাখায় ১২ জন শিক্ষক ও ২শ’ জন শিক্ষার্থী এবং কলেজ শাখায় ১৬ জন শিক্ষক ও একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে মোট ৮শ’ ২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলামের ছুটিজনিত কারণে অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব প্রদান ও হস্তান্তরের বিষয়টি লেজে গোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যা অত্যন্ত হাস্যকর বটে। ঘটনার প্রেক্ষাপটে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম গত ১৬ জুলাই ১২ গভর্নিং বডির সভায় বিদেশে যাওয়ার জন্য ৩ মাসের ছুটি আবেদন করেন। সভায় তার ছুটি মঞ্জুর করা হয় এবং ঐ সভায় অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব পালনে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও হাজীগঞ্জ মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারীর বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৯ জুলাই ১২ গভর্নিং বডির সভায় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারীকে দায়িত্ব প্রদানে আপত্তি জানিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র মোতাবেক বিষয়টি সাংঘর্ষিক। তাই এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিকট ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ঐ দিনেই (২৯ জুলাই ১২) অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হস্তান্তর পত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেনকে বুঝিয়ে দিয়ে ছুটিতে চলে যান। দেখা যায়, ঐ হস্তান্তরের পত্রে লেখা আছে “আমি অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম হাজীগঞ্জ পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, অদ্য ২৯ জুলাই ১২ নব নিযুক্ত অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত) এর নিকট অত্র প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক দায়িত্বভার হস্তান্তর করলাম এবং আমি অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত) অদ্য ২৯ জুলাই ১২ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের নিকট হতে অত্র প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক দায়িত্বভার গ্রহণ করলাম”। এখানে উল্লেখ্য যে, কার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলো এবং কে গ্রহণ করলেন তার নাম উল্লেখ নেই। দায়িত্ব প্রদানকারী হিসেবে অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম ২৯ জুলাই ১২ স্বাক্ষর করেন এবং দেখা যায় দায়িত্ব গ্রহনকারী হিসেবে মো. হোসাইনুল আজম স্বাক্ষর করেন ১৭ অক্টোবর ১২ তারিখে। হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি উক্ত পত্রে প্রতিস্বাক্ষর করেন ১৭ অক্টোবর ১২ তারিখে। প্রশ্ন হচ্ছে ২৯ জুলাই ১২ হতে ১৬ অক্টোবর ১২ পর্যন্ত ২ মাস ১৯ দিন উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কে পালন করলেন। এ ছাড়াও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে (জনবল কাঠামোর ৫ম নম্বর ব্যক্তি) কোন সিদ্ধান্ত মতে সহকারী প্রধান শিক্ষককে অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হলো। ২৯ জুলাই ১২ অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পন ও গ্রহণ বিষয়টি কোন সভায় গৃহিত হলো তা ষ্পষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত ০৮ অক্টোবর ১২ এর অধিবেশন নং-০৬ এর রেজুলেশন মতে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোহাম্মদ এমরান হোসেন অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারীকে দায়িত্ব দেয়া যায় কিনা এর ব্যাখ্যা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মহোদয় বরাবর ১৭ সেপ্টেম্বর ১২ (স্মারক নং-হাপাহাক/অদাপ্রঃ ০৪/১২) একটি পত্র পাঠান। পত্রের জবাব মন্ত্রনালয় থেকে পাওয়া গেছে কিনা জানা যায়নি। এরই মধ্যে অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরবার লিখিত ভাবে হাজীগঞ্জ পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের দায়িত্বভার গ্রহণের অপারগতা প্রকাশ করেন। ০৮ অক্টোবর ১২ গভর্নিং বডির সভাটি কে বা কারা কোথায় আহ্বান করেছেন তাও ষ্পষ্ট নয়। এ সভার ব্যাপারে কোনো প্রকার নোটিশ বা গভর্নিং বডির সদস্যগণকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়নি বলে গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আবুল কাশেম জানান। এদিকে গত ১৩ অক্টোবর ১২ কুমিল্লা বোর্ডের পরিদর্শক সৌমেনকর চৌধুরী উক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে এসে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে কাউকে পাননি এবং সভাপতি ও অধ্যক্ষের (সদস্য সচিব) যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেন করার কথা পরিদর্শন বহিতে তিনি লিপিবদ্ধ করে যান। এদিকে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্যাতীত গভর্নিং বডির কোনো সদস্য বিদ্যালয়ের প্যাডে কোনো শিক্ষার্থীকে নিজের সহি দিয়ে প্রশংসাপত্র প্রদানের নিয়ম না থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরে আল-আমিন, পিতা-ফজল হক, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ কে ৬/১০/১২ইং তারিখে বিদ্যালয়ের প্যাডে একটি প্রশংসা পত্র প্রদান করেন। এ ছাড়াও গভর্নিং বডির সভাপতি হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন শিক্ষকদের জুন মাসের বেতন ও উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন ফরমে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর করেন এবং সভাপতি হিসাবেও প্রতিস্বাক্ষর করেন। বর্তমান রেওয়াজ অনুসারে প্রতি মাসে শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসাবে গভর্নিং বডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রতি স্বাক্ষর করেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্থানে গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষর ঐ পত্রেই সভাপতির স্বাক্ষর/প্রতিস্বাক্ষর বিধি সম্মত কিনা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. লিয়াকত আলী জানান, কাগজ পত্র দেখে তার কাছে বিষয়টি বিধি সম্মত নয় বলে জানান। কেননা ইউএনও স্যার প্রতিষ্ঠান প্রদান হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন এবং সভাপতি হিসাবেও বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেছেন। এ বিষয়ে যোগযোগ করলে অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী কোনো প্রকার মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।