সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ
হাজীগঞ্জ পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা। এ পৌরসভার প্রায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি র্দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলদারের হাতে রয়েছে। আর এ সম্পত্তি উদ্ধারে পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নান খান বাচ্চু গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে তার অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনের করেন। এ সময় তিনি উক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। আর এ দখল করে রেখেছেন হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতাওয়ালস্নী আলমগীর কবির পাটওয়ারী। দখলকৃত সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার জন্য কলেজ অধ্যÿকে পৌরসভার পÿ থেকে কয়েকবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও তারা কর্নপাত না করায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সাংবাদিক সস্মেলনে মেয়র বলেন হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতাওয়ালস্নী আলমগীর কবির পাটওয়ারী পৌরসভার ৯৪ শতাংশ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। যার বর্তমান মূল্য হবে ২৫ কোটি টাকা। পৌরসভার যে কোনো সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পৌরবাসী আমাকে দিয়েছে। আমি পৌরবাসীর দেয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে বদ্ধপরিকর। তবে এ ক্ষেত্রে পৌরবাসীর সকল প্রকার সহযোগিতা প্রয়োজন।১৯৩০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসের ৬ তারিখে ৬১৮ নং দলিল মূলে ৯৪ শতাংশ সম্পত্তি তৎকালীন ৩ নং ইউনিয়ন বোর্ডের নামে সাফ-কবলা দলিল করে দেন হাজীগঞ্জের বিশিষ্ট দানবীর ও সমাজসেবক এবং সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবদুর রব মিয়ার পিতা মোঃ আমিন মিয়া। বর্তমানে কাগজপত্রে হাজীগঞ্জ পৌরসভা এ সম্পত্তির মালিক। ১৯৯১ সালে হাজীগঞ্জ মহিলা কলেজ (বর্তমানে হাজীগঞ্জ মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ নামে পরিচিত) পৌরসভার ২১৩ নং মকিমাবাদ মৌজার পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তির একাংশ দখল করে কলেজ স্থাপন করা হয়। তখন পৌরসভার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী পৌরসভার সম্পত্তির উপর কলেজ না করার জন্যে মৌখিকভাবে বাধা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও বাজারের কিছু লোকের সহযোগিতায় কলেজ করা হয়। এরপর আস্ত্মে আস্ত্মে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর কবির পাটওয়ারী পৌরসভা থেকে অনুমতি না নিয়ে পৌরসভার সম্পত্তি দখল করতে শুরম্ন করেন। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ দখল করে ফেলেন।
পৌরসভার সম্পত্তি দখল না করার জন্য এবং দখলকৃত পৌরসভার সম্পত্তি ছেড়ে দেয়ার জন্যে তৎকালীন পৌরমেয়র তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী ২৮/৮/২০০২ তারিখে অধ্যক্ষ আলমগীর কবির পাটওয়ারীকে পৌরসভার পক্ষ থেকে চিঠি দেন। ঐ চিঠিতে তিনি উলেস্নখ করেন, ২১৩ নং মকিমাবাদ মৌজার ৬৬০ দাগে ৯৪ শতাংশ জায়গার মালিক হাজীগঞ্জ পৌরসভা। উক্ত ভূমিতে আপনি পৌরসভার কোনো অনুমতি বা অনুমোদন কিংবা কোনো প্রকার যোগাযোগ না করে আংশিক ভূমিতে কলেজ স্থাপন এবং বাকি অংশে পুকুরসহ দখল করেছেন। এ বিষয়ে আমি আপনাকে মৌখিকভাবে বহুবার বলেছি। পৌরসভার সম্পত্তি স্থানীয় সরকার পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তথা সরকারের সম্পত্তি। কাজেই সরকারি সম্পত্তির রক্ষক বিধায় উক্ত সম্পত্তি পৌরসভার দখলে আনা প্রয়োজন। এই চিঠির অনুলিপি তখনকার সংসদ সদস্য এম এ মতিনকে প্রদান করা হয়।৭/০৮/২০০৩ তারিখে ঐ সময়ের জাতীয় সংসদ সদস্য এমএ মতিন পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রেরিত অনুলিপির সূত্র হিসেবে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর কবির পাটওয়ারীকে একটি উপ-আনুষ্ঠানিক পত্র লিখেন। ওই পত্রে তিনি উলেস্নখ করেন, ‘পৌরসভার চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী কর্তৃক প্রেরিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিনের সৃষ্ট বিরোধটি সকল বিবেচনায় অনাকাক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত বলে আমি মনে করি। জনস্বার্থে উলেস্নখিত বিরোধটি জরম্নরি ভিত্তিতে উভয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমে শান্ত্মিপূর্ণ স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এ সমস্যা ঝুলিয়ে রাখলে ভবিষ্যতের ফল ভালো হবে না বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। সমাধান করার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি’। ১৫/০৫/২০০৪ তারিখে হাজীগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী শিক্ষা সচিব বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করেন। ঐ চিঠিতে তিনি উলেস্নখ করেন, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ অবৈধভাবে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মালিকানাধীন ৯৪ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। পৌরসভার ৯৪ শতাংশ জায়গা ফেরৎ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে তিনি অনুরোধ করেন। ১৩/৪/২০০৪ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকেও চিঠি দিয়ে পৌরসভার ৯৪ শতাংশ জায়গা ফেরৎ দেয়ার জন্যে অনুরোধ জানানো হয়। সবশেষ ১৬/৪/২০০৪ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে চেয়ারম্যান নসু চৌধুরী বলেন, হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ অবৈধভাবে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৯৪ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। পৌরসভার সম্পত্তি ফেরৎ দেয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি মেয়র আবদুল মান্নান খান বাচ্চু বলেন, আমি প্রথম চেয়ারম্যান হওয়ার পর হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর কবির পাওয়ারীকে বহুবার বলেছি পৌরসভার ৯৪ শতাংশ জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেননি। দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমি আমার প্যানেল মেয়রসহ তিন সদস্য একটি প্রতিনিধি দল তার কাছে পাঠিয়েছি পৌরসভার সম্পত্তি ফেরৎ দেয়া এবং এ সমস্যর সমাধানের জন্যে। কিন্তু আলমগীর কবির পাটওয়ারী আমার প্রেরিত প্রতিনিধিদের সাথে তেমন ভালো ব্যবহার করেননি। মেয়র বলেন, পৌরসভার আইন অনুযায়ী পৌর এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমতি লাগে। কিন্তু তিনি এতটুক সম্মান করেননি। তিনি কী এতো বড় ক্ষমতাবান হয়েছে যে, পৌরসভার সোয়া দু’লাখ মানুষের জায়গা তিনি এককভাবে দখল করে রাখবেন। আমি পৌরসভার সকল মানুষকে একত্রিত করে এ জায়গা উদ্ধারের জন্যে প্রয়োজনে মামলা করবো। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হবে না। সরকারকে জায়গার খাজনা দেবে পৌরসভা আর জায়গা দখল করে রাখবে আলমগীর কবির পাটওয়ারী, এটা হতে পারে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্যে আমি আইনি সকল প্রকার ব্যবস্থা নেবো। এক বিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। তিনি যতোই ক্ষমতাবান ব্যক্তি হোক না কেনো।সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ আবুল কাশেম, কাউন্সিলর মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুন্সী মোহাম্মদ মনির, সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন, সহ-সভাপতি মোঃ শাহাজাহান মুন্সী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কামরম্নজ্জামান টুটুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরম্নজ্জামান বাবলু সহ প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ।