লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ এলাকার দুর্ধর্ষ কিলার শাহেদ ওরফে পাকিস্তানী (২৫)কে দেশী-বিদেশী অস্ত্রসহ আটক করেছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। সে গত মাসে খুন হওয়া হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্র মাইনুদ্দিন চিশতী ওরফে শামীম হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৭টায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় শাহেদের কাছ থেকে পুলিশ ১টি বিদেশী রিভলবার, ২টি দেশী একনলা ছোট বন্দুক, ৩টি পিসত্দলের গুলি, ২টি একনলা বন্দুকের গুলি, ২টি মোবাইল ও ২টি আলাদা সিম কার্ড উদ্ধার করে। আটকের সময় শাহেদ পুলিশকে লক্ষে করে ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। শাহেদের নামে রামগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন। আটক শাহেদের গ্রামের বাড়ি রামগঞ্জ উপজেলার ২নং নোয়াগাঁও ইউনিয়নের শোরসই গ্রামের কাজী বাড়ি। তার বাবার নাম জান মোহাম্মদ ওরফে আইয়ুব আলী। বাবা দীর্ঘদিন পাকিস্তান ছিলেন। এখন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পাকিস্তানে থাকাকালীন আইয়ুব আলী পাকিস্তানী নাগরিক ছিলেন। এজন্যে তাকে এবং তার ছেলেকে এলাকায় সবাই পাকিস্তানী বলে সম্বোধন করে।
রামগঞ্জ থানার এসআই ও শামীম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহম্মদ জানান, বিভিন্ন তথ্যের সূত্রে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা শাহেদ ওরফে পাকিস্তানীকে আটকের জন্য অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু সে বড় ধরনের সেয়ানা বিধায় তাকে বাগে আনা সহজ ছিলো না। সর্বশেষ আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই, সে তার মামার বাড়ি সংলগ্ন একটি বাড়িতে অবস্থান করছে। ভোরে আমরা পুলিশের বড় একটি টিম নিয়ে সেখানে অভিযান চালাই। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আমাদের জালে ধরা পড়ে শাহেদ। এক পর্যায়ে সে ঐ বাড়ির ছাদে উঠে আমাদেরকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। আমরা এ সময় তাকে ধরতে ও আত্মরক্ষার্থে পরপর ৪ রাউন্ড পাল্টা গুলি চালাই।
এসআই ফারুক আহম্মদ আরো জানান, আটক শাহেদ শামীম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলাসহ আরো তিনটি মামলা রয়েছে।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম মঞ্জুরুল আলম আকন্দ জানান, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শাহেদ আমার ফোর্সের উপর গুলি চালায়। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনায় পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
শাহেদ আটকের খবর শুনে রামগঞ্জ থানায় ছুটে যান হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান আবুল হোসেন । এ বিষয়ে তিনি চাঁদপুর নিউজকে জানান, যেহেতু আমাদের থানায় শামীমের বাবার একটি ডায়েরি করা রয়েছে, আর সেটির তদন্ত চলছে, তাই আমরা এ মামলার স্বার্থে রামগঞ্জ থানায় গিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া তালুকদার বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্র মাঈনুদ্দিন শামীমকে বন্ধুরা মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পরের দিন সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর ৯ দিন পর গত ২৫ আগস্ট হাজীগঞ্জ ও রামগঞ্জ সীমান্তবর্তী নোয়াগাঁও বিলে শামীমের ক্ষতবিক্ষত লাশের সন্ধান মিলে। পরদিন ২৬ আগস্ট রামগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শামীমের বাবা। মামলা নং ১৬।
নিহত কলেজ ছাত্র শামীমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুর নিউজকে জানান, আমার কামনা থাকবে এ চক্রের সবাই আটক হবে ও আইনের আওতায় তাদেরকে আনা হবে। তবেই আমার ও আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।