গত বছরের চেয়ে এবার জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ১০/১২ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ফরিদগঞ্জে একটি গ্রামের ৩টিসহ উপজেলার প্রায় ১২টি সেচ পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে এ বছর ফরিদগঞ্জের প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে বোর ধান চাষ করতে পারছে না কৃষকরা। বীজতলা তৈরি করেও সময়মত জমি তৈরি করতে না পারায় অধিকাংশ চারাই নষ্ট হয়ে গেছে। কেউবা স্বল্পমূল্যে চারাগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে মাঠের পর মাঠ এখন অনাবাদী হয়ে আছে। গত বছর এ সময় যে জমিতে ধানের আগাছা পরিষ্কার করে ব্যস্ত সময় কাটাতো কৃষক, এবার সেগুলো গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
স্কীম ম্যানেজার ও চাষীদের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা যায়, বন্ধ হওয়া সেচ পাম্পগুলোর মধ্যে ফরিদগঞ্জ পূর্ব বড়ালী গ্রামের ৩টি, রুপসা গ্রামের ১টি, কড়ৈতলী ১টি, পশ্চিম বড়ালী গ্রামের ১টি, গৃদকালিন্দিয়ার ২টি, নয়াহাটের ২টি ও বালিথুবায় ২টি রয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ধান চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে সেচ পানির অপেক্ষায় ছিলেন কৃষক। সময়মত সেচ পানি না পাওয়ায় কৃষকের সব পরিশ্রমই বৃথা যায়। অনেকে নিশ্চিত লোকসান জেনেও ধানের চারাগুলো রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে পুকুর থেকে পানি নিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করেছেন।
শুধু সেচ পানিই নয়, গত বছরের তুলনায় এ বছর সারের দামও বেড়েছে বলে জানা যায়। সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী সারের দোকানগুলোতে সাদা ইউরিয়া ২০ টাকা ও টিএসপি ২২ টাকা মূল্যের একটি চার্ট টানানো হলেও বিক্রি হচ্ছে তার প্রায় দ্বিগুণ দামে। গত বছর সাদা ইউরিয়া প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০/৩২ টাকা। এ বছর কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬/৩৮ টাকা। কালো ইউরিয়া প্রতি কেজির মূল্য ছিল ১৮/২০ টাকা। এ বছর ২২/২৪ টাকা। সার দোকানদাররা জানান, কৃষকের চাহিদা অনুসারে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ সার অর্ডার দিয়েও বর্তমান মৌসুমে পাচ্ছেন না বলে এমনটি হচ্ছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর তারা জমিতে বিনিয়োগ করে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন করেন বিক্রির পর সে পরিমাণ লাভ তারা পান না। বিগত বছরগুলোতে হতাশার গ্লানি নিয়ে তারা মাঠে নামলেও এ বছর ভর্তুকি দিয়ে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে চান না তারা।
কয়েকজন স্কীম ম্যানেজার সাথে কথা বললে তারা জানান, হঠাৎ করে জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায়, আগের দামে আমাদের পক্ষে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে আমরা এলাকাভিত্তিক কৃষকদের সাথে একাধিক সভা করে সেচের বর্ধিত মূল্য দাবি করলে কৃষকরা তাতে অসম্মতি জানায়। ফলে আমরা এ বছর সেচ এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।
কৃষিবিদদের ধারণা এক সাথে একটি উপজেলায় প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ না হওয়ায় চলতি বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসের আন্তরিক হওয়া উচিত।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আবু তাহের জানান, বোরো চাষের উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক বেশি লাভের আশায় বর্তমানে বোরো ধান চাষাবাদ বাদ দিয়ে রবিশষ্যের দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে তারা অধিকাংশই সয়াবিন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
শিরোনাম:
রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।