চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়ায় বড়বাড়িতে যৌতুকের জন্য স্ত্রী সাথী আক্তার (২৪)কে ইটদিয়ে মাথায় আঘাত করে পাষন্ড স্বামী শরীফ হোসেন খান হত্যা করার অভিযোগের ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আটক আসামী শরীফ খানকে পুলিশ মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে চাঁদপুর আদালতে পাঠালে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এর আগে সোমবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তফা কামাল সঙ্গীয় ফোর্সসহ ব্যাপক চেস্টা চালিয়ে সদর উপজেলার বহরিয়া বড় খান বাড়ি এলাকা থেকে সুকৌশলে শরীফ খানকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
আসামী শরীফ খান তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর গত ৩ মার্চ থেকে সে ১মাস ১০দিন বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকে। এরই মধ্যে পুলিশও তাকে আটক করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের সোর্স ব্যবহার করে কয়েক দফা অভিযান চালালে চতুর আসামী শরীফ ও সুকৌশলে পুলিশকে ফাকি দিয়ে পালিয়ে যায়। অবশেষে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বহরিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে ঘরের তালা ভেঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ সফলতা পায়।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর মাথায় স্বামী শরীফ হোসেন খান ইট দিয়ে আঘাত করে ও গলাটিপে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ সাথী আক্তার(২৪)কে যৌতুকের জন্য হত্যা করার অভিযোগ এনে চাঁদপুর মডেল থানায় শরীফসহ ৩জনের বিরুদ্বে একটি নিহতের মা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে গত ৪মার্চ।
ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ৩ মার্চ সন্ধ্যায় সদর উপজেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকার মোখলেছ খান নামক বড় খানবাড়ীতে।
এ ঘটনায় গৃহবধূর মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে নিহতের স্বামী শরীফ খান,তার বোন রাবেয়া বেগম ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী হালিমা বেগমকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করে চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার পর এলাকাবাসী হত্যাকারী স্বামী শরীফকে আটকের পর মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার চেস্টা কালে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান টিটু শরীফকে এলাকাবাসীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমান সয়য় পর্যন্ত টিটুর হস্তক্ষেপে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনার বিবরনে উলেখ্য যোগ্য বিষয় জানা গেছে,নিহত সাথী আক্তারের স্বামী শরীফ খান এর পূর্বে একটি বিয়ে করে পশ্চিম রামদাসদী দোকানঘর এলাকার রফিক মল্লিকের মেয়ে রোকেয়া বেগমকে। সে সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। শরীফের নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাচাঁতে দুই সন্তান নিয়ে তখন প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত তিন বছর পূর্বে শরীফ খান চান্দ্রা এলাকার বাখরপুর পাটওয়ারী বাড়ির মিজানুর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করে। সাথীর সংসারে দুই বছর বছরের সুমনা নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত সাথীর পিতা মিজানুর রহমান জানান, বিয়ের সময় ও তার পর শরীফকে ৭বারে যৌতুক বাবদ শরীফকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যবসা করার জন্য দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার( ২মার্চ) যৌতুকের জন্য সাথীকে শরীফ মাথায় এবং শরীরে ইটদিয়ে বহু বার আঘাত করেছে। আঘাত করার পর সাথী বিষয়টি ফোন করে তার বাবা ও মাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আশিব হাসান চৌধুরী ঘটনার পরই জানান, মরদেহের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, দীর্ঘ দিন চেস্টার পর মডেল থানার চৌকস অফিসার এস আই মোস্তফা কামাল আসামী শরীফ খানকে গ্রেফতার করেছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঘটনাটি যখন ঘটে,তখন জানান পর পর আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এ ব্যাপারে নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে নিহতের স্বামী,তার বোন ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আসামী করে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার আলোকে গত ৫ মার্চ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় একটি রিপোট প্রকাশিত হয়ে ছিল ১১নং পাতায়। যার শিরোনাম ছিল স্বামীর ইটের আঘাকে স্ত্রীর মৃত্যৃ
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান,ঘটনা গত ১মাস ১০দিন পর অনেক বার চেস্টার পর আসামী শরীফ খানকে মামলামূলে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর পূর্বে কয়েকবার চেস্টা চালিয়ে তাকে আটক করতে গেলে সে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশকে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। সে অনেক চতুর প্রকৃতির লোক। যখনই চেস্টা চালাই তখনই সে টের পেলে পালিয়ে যেত। সোমবার সে তার ঘরে প্লেটে ভাত রেখে পালিয়ে যায়। পাশের একটি বাড়ির ঘরে। সে ঘরে অভিযান চালিয়ে ঘরের তালা ভেঙে অনেক চেস্টার পর তাকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর সেটির অবস্থার উপর নির্ভর করে আসামী শরীফের বিরুদ্ধে চার্জসীট আদালতে দাখিল করা হবে।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট/চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/