শওকত আলী ,
মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় নৌকা ও জালবিহীন অনেকটা নীরবতা বিরাজ করছে। মঙ্গলবার রাত ১২ টা থেকে ইলিশ শিকার বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। নৌ-এস পি সুব্রত কুমার হালদার বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর নৌ সীমানার শেষ ও বরিশাল ক্যানেলে অভিযান চালিয়ে ১ লক্ষ ৭২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল,২টি ফিসিং বোড ,৫০কেজি ইলিশ মাছ,১৮ জন জেলেকে আটক করে। এদের মধ্যে ১২জন জেলেকে ভ্রাম্যমান আদালতে ১ বছর করে কারাদন্ড প্রদান ও ৬জন জেলেকে ৫হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
চাঁদপুরের পদ্ম ও মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় ১মদিনে গতকাল বুধবার বিকেলে হানারচর ও আলুবাজারে পৃথক অভিযানে ৫০ কেজি নিযিদ্ধ কারেন্ট জাল আটক করা হয়েছে । এর মধ্যে জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডলের নেতৃত্বে হানারচরে অভিযান চালিয়ে ৩০ কেজি নিযিদ্ধ কারেন্ট জাল ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ) মোহাম্মদ আব্দুল হাই’র নেতৃত্বে আলুবাজারে অভিযান চালিয়ে ২০কেজি নিযিদ্ধ কারেন্ট জাল আটক করতে সক্ষম হন। এ ছাড়াও এদিন ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল হক মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে রাতে দুটি মাছ ধরার নৌকা আটক করে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলা টাস্কফোর্স অভিযানে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫শ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেছে। এছাড়া মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ি ১০ হাজার কারেন্ট জাল উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার হাজীগঞ্জে মাছ ব্যবসায়ী শাহ আলম (৫৫) কে ইলিশ বিক্রির সময় হাতে নাতে তাকে আটক করে ১২ কেজি ইলিশ উদ্ধার করা হয় এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা। মতলব উওরে মাছ শিকার কালে বৃহস্পতিবার বিকেলে মো: হযরত আলী(৪০) কে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা এস এম সারোয়ার কামাল ভ্রাম্যমান আদালতে হযরত আলী কে ২ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের ৭টি বরফকল বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীতে কোস্টগার্ডের দুইটি টিম দিনে ও রাতে টহল দিচ্ছে। এছাড়া নৌ -পুলিশ, জেলা প্রশাসনের নৌ-টিম ও মৎস্য বিভাগের মোবাইল টিম পৃথক পৃথকভাবে নদীতে টহল দিচ্ছে। বিগত বছরে মা ইলিশের প্রজনন সময় অসাধু জেলেরা ব্যাপক হারে মা ইলিশ শিকার করে মেঘনার পশ্চিমে বিভিন্ন চরে ডিম আলাদা করে লবণ দিয়ে গর্ত করে ইলিশ সংরক্ষণ, চোরাই পথে বিভিন্ন স্থানে পাচার করত। অতীতের এসব ঘটনা আমলে নিয়ে এবার জেলা প্রশাসন গোয়েন্দা নজরদারীর ব্যবস্থা জোরদার করায় এর সফলতা দেখা যাচ্ছে। জেলা কান্টিফিসিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মল্লিক জানান এবার মৌসুমের আগেই সব জেলে পর্যাপ্ত মাছ পেয়েছেন। সে কারণে জেলেরা খুশি। তাই এরইমধ্যে জেলেরা নদী ও সাগর থেকে ফিরে এসেছে। মাছ ধরার সব নৌকা এখন নদীর তীরে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূইয়া জানান চাঁদপুর মাছ ঘাটে এক ছটাক ইলিশও আমদানি রপ্তানী হবে না। সরকারের গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানান, মা ইলিশ রক্ষায় অতীতের চেয়ে এবার প্রশাসন কঠোর। যে কোন মূল্যে মা ইলিশ রক্ষা করা হবে। জেলেরা যাতে নদীতে নামতে না পারে সে জন্য চাঁদপুরের ৪১ হাজার ৪২ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে ভিজিএফ এর আওতায় খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে এ চাল বিতরণ করা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। ক্রেতাদের নেই ভীড়। মাছ ব্যবসায়ীরাও ঘাটে নেই। অল্প কিছু শ্রমিক বসে গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছেন। তারপরও তাদের মনে অতৃপ্তির চিহ্ন দেখা যায়নি। তারাও এবার খুশি।
। সদর ইউএনও উদয়ন দেওয়ান ও এসি ল্যান্ড পঞ্জজ বড়–য়ার নেতৃত্বে রাতে পদ্ম-মেঘনায় ব্যাপক অভিযান চালানো হচেছ প্রতিদিন ।উল্লেখ্য ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্ম-মেঘনা নদীতে মা ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরা নিযিদ্ধ করেছে সরকার ।