শাহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥
চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নে বাল্য বিয়ের নোটিশ অমান্য করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে কনে ও বরপক্ষকে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ২ হাজার টাকা জরিমান আদায় করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী অফিসে তাদের এ জরিমানা আদায় করা হয়।
জানাযায়, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের চরফতেজংপুর গ্রামের মো. নাছির মিজির তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক কণ্যা মোসাঃ হোছনা আক্তার (১৬)কে একই গ্রামের মো. মুক্তার পাটওয়ারীর ছেলে মো. মানিক পাটওয়ারীর সাথে ২১ সেপ্টেম্বর বাল্য বিয়ের দিন ধার্য করে পূর্বপ্রস্তুতিসহ নিমন্ত্রন পত্র বিতরন করে। এ খবর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসলে তাদেরকে বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর তাদেরকে নোটিশ প্রদান করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর কণের বাবা নাছির মিজিকে নোটিশ করলে সে সে নোটিশ ১৮ তারিখে গ্রহন করে ১৯ সেপ্টেম্বর ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে মেয়ের বাল্য বিয়ে সম্পাদান করে। অথচ বিয়ের নিমন্ত্রন পত্রে ২১ সেপ্টেম্বর বিয়ের দিন ক্ষন তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এ ভাবে বিয়ের তারিখসহ আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রনপত্র বিতরন করে ২ দিন আগে বিয়ে দেওয়ায় এলাকায় বেশ হস্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিবাহের কাজী রেজিস্টার ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাজী মো. ওমর ফারুক। তিনি বিয়ের রেজিস্টর খরচ ২৫শত টাকা গ্রহন করে।
উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যন মো. কাশিম খানকে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বললে ইউপি চেয়ারম্যান ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জন্মনিবন্ধন কপিসহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সে প্রতিবেদনসহ জন্ম নিবন্ধনে কনে হোছনা আক্তারের জন্ম ৫/ ৩ / ২০০০ ইং দেখানো হয়েছে।। যার জন্ম নিবন্ধন নং ২০০০১৩১২২৬৩০০০৪৭৩, নিবন্ধনের তারিখ ২০. ৭.২০০৮ দেখানো হয়েছে। চেয়ারম্যানের সে তথ্যমতে কণের বয়ের আঠারোর নিছে রয়েছে।
কিন্তু মেয়ের বাবা নাছির মিজি পুরান বাজার মধ্য শ্রীরামদী মিজি বাড়ির বাসিন্দা দেখিয়ে ৬/ ৯/ ১৬ ইং তারিখে ১৯৯৮১৩২১৪০২১৮৭৪৫৬ জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে একটি জন্ম নিবন্ধন করেন। সে জন্ম নিকন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ৩০ / ৬ / ১৯৯৮ ইং। যে জন্ম নিবন্ধনে যাচাইকারী অরুপ কুমার শ্যাম, ইন্সপেক্টর, চাঁদপুর পৌর সভা নামসহ সীল রয়েছে। একই নিবন্ধনে মো. ছিদ্দিকুর রহমান ঢালী প্যানেল মেয়র চাঁদপুর পৌর সভা নাবন্ধকের স্বাক্ষর ও নামসহ সীল রয়েছে। এ নিবন্ধন দিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে।
বিরাজমান অবস্থায় কেন বাল্য বিবাহ কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে, সে জন্য মেয়ে, ছেলে, মেয়ের বাবা মা, বরের বাবা মা কাজীসহ বিয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ করলে, তারা ২৫ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে আসলে তাদের বাংলাদেশ বাল্য বিয়ে আইনে তাদের উভয় পক্ষ কনের বাবা নাছির মিজিকে ১ হাজার টাকা ও বরের বাবা আক্তার পাটওয়ারীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যারা ভুয়া নিবন্ধন করে এ বাল্য বিয়ে সম্পাদান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। একই লোকের ২টি জন্ম নিবন্ধন হওয়ার কারনে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের সর্ব মহলে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। যেখানে বর্তমান সরকার বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য আইন প্রয়োগ করেছে। সেখানে এক শ্রেনীর লোকের কারনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে বাল্য বিয়ে অব্যাহত রেখেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি সচেতন মানুষ অনুরোধ জানিয়েছে।
এ দিকে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের জাফরবাড়ী কৃষ্ণপুর জোহরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী কেতুয়া গ্রামে বর্ধন বাড়ির স্বপন চন্দ্র বর্ধনের মেয়ে অনিতার আজ বাল্য বিয়ে হওয়ার খবর আসলে গতকাল উপজেলা নিবার্হী অফিস থেকে তাদেরকে বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য একটি নোটিশ প্রদান করে। নোটিশ অমান্য করে বিয়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এ উপজেলা নিবার্হী অফিস জানান।