প্রতিনিধি
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে ফ্যামিলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড চেম্বারের কর্ণধার ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পালের মেয়ে ডাক্তার লিপিকা রাণী পালের ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতক শিশু কন্যার মৃত্যুর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নবজাতকের পিতা পৌর এলাকার চরকুমিরা গ্রামের শ্রী সুমন চন্দ্র দাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। উক্ত অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে উক্ত ডাক্তার লিপিকা রাণী পাল ও তার পক্ষের ক’জন দাবি করছেন, মূলত চাঁদপুরে গিয়ে টাকার অভাবে জীবিত শিশুটির সঠিক চিকিৎসা করাতে না পারায় শিশুটির মৃত্যু ঘটেছে। আর এখন এ নিয়ে পূর্ব শত্রুতা বশত তৃতীয় একটি পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য খুঁজতে বের হলে সাংবাদিকদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে ডাক্তার লিপিকার পক্ষের লোকজন। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উপজেলার ডাকবাংলোয় গত বুধবার রাতে রোগীর পক্ষ ও ডাক্তারের পক্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক এক বৈঠকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যের হাতে নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মামলা দায়ের থেকে মুক্তি পায় ডাক্তার লিপিকা রাণী।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, শ্রী সুমন চন্দ্র দাসের স্ত্রী পূর্ণিমা রাণী দাসের প্রসব ব্যথা উঠলে ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় তাকে ফ্যামিলি কেয়ার চেম্বারে পাঠানো হয়। ঐ চেম্বারের কর্ণধার ডাঃ লিপিকা রাণী পাল প্রসূতিকে দেখে তিনি নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেলিভারীর জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন। দিবাগত রাত ২টায় মোবাইল ফোনে রোগীর অবস্থা ভালো না, তাকে অপারেশন করতে হবে বলে জানান। তাৎক্ষণিক তিনি ঐ ক্লিনিকে গেলে ডাঃ লিপিকা রাণী পাল তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং কাগজে স্বাক্ষর নেন। ঐ ডাক্তার নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন করেন। ভোর ৬ টায় জীবিত কন্যা শিশুর জন্ম হয়। ১৫ মার্চ ৬ টায় হঠাৎ নবজাতক শিশুর অবস্থা খারাপ বলে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে। শিশুর অবস্থা বেগতিক দেখে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে গত বুধবার সকাল ১০ টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে নবজাতক শিশু কন্যার মৃত্যু হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডাঃ লিপিকা রাণী পাল এই প্রতিনিধিকে বলেন, রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তাকে চাঁদপুরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তাদের টাকার সঙ্কট দেখিয়ে আমার চেম্বারেই রাখতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে ওই রাতে অজ্ঞান করার কোনো ডাক্তার না পেয়ে রোগীর মায়ের সই স্বাক্ষর নিয়ে আমি ডিএনসি করার ইনজেকশন প্রয়োগ করে রোগীকে অজ্ঞান করে জীবিত বাচ্চা প্রসব করাতে সক্ষম হই। বাচ্চা প্রসবের পরদিন চাঁদপুরে রেফার করার পর শুনেছি ওই বাচ্চাটি মারা গেছে।
‘ডাক্তারী পেশার সরকারি সনদ আছে কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে লিপিকা রাণী পাল তার ডাক্তারী সনদ নং ৫৫২৮৩ এবং এই সনদের মেয়াদ ২০৩৬ সাল পর্যন্ত আছে বলে জানান। ‘ভুল চিকিৎসা না হলে ৮০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে কেন’ এমন প্রশ্নের জবাব হিসেবে লিপিকা রাণী পাল আরো বলেন, মূলত আমি মানবিক কারণে পরে ওই অসহায় রোগীর জন্য ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে এই টাকাটা দেয়াই আমার ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি।
ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির জানান, উক্ত বিষয়ে মামলা দিতে প্রথমে অভিযোগ দিলেও পরে বাদী পক্ষ মামলা দিতে রাজি না হওয়ায় মামলাটি নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে শুনেছি দুই পক্ষই নাকি টাকার বিনিময়ে ডাকবাংলোয় মীমাংসা হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকুরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সিভিল সার্জন ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পালের একমাত্র কন্যা ডাক্তার লিপিকা রাণী পাল। মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাইলে বাবা হিসেবে ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পাল তার মেয়ে লিপিকা রাণীর ডাক্তারী সনদ সঠিক রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তার সম্পর্কে আমার আর কোনো কিছুই বলার নেই। সে আমার কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে তার মতো করেই জীবন যাপন করছে।