চাঁদপুর:
সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। ৮ তলা থেকে শুরু করে ১২ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। চাঁদপুর শহরে ১০ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। আর হাজীগঞ্জে নির্মাণ হচ্ছে ১২ তলা ভবন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে সর্বোচ্চ ১০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন আছে। আর হাজীগঞ্জেও রয়েছে ১০ তলা পর্যন্ত। এসব বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। বহুতল ভবন নির্মাণের ৰেত্রে যে সব নিয়ম রৰা করার কথা সে সব নিয়মের ক্ষেত্রে ধার ধারে না কেউই। অভিযোগ রয়েছে_ ভবন নির্মাণের আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ থেকে যে ক্লিয়ারেন্স নেয়ার বিধান রয়েছে তা টাকার বিনিময়েই হয়ে থাকে। ফলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের যে সব শর্ত রয়েছে তার কোনোটিই বিদ্যমান থাকছে না ভবনগুলোতে।
বছর পাঁচেক আগে চাঁদপুরে সর্বোচ্চ ৫/৬ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ হলেও এখন ১০ তলা পর্যনত্দ নির্মাণ হচ্ছে। পৌর এলাকায় ৮-১০ তলার একাধিক নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। চাঁদপুর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরে সর্বোচ্চ ১০ তলা পর্যনত্দ নির্মাণের অনুমোদন আছে। আর হাজীগঞ্জ শহরে ইতিপূর্বে সর্বোচ্চ ৬ তলা পর্যনত্দ অনুমোদন থাকলেও সম্প্রতি এটি ১০ তলা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নকশা অনুমোদনের সাথে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ক্লিয়ারেন্সের বিধান রয়েছে। এ বিভাগের কর্মকর্তারা সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ, অগ্নি নির্বাপণ, উদ্ধার ও জননিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কিনা সে বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ বরাবর রিপোর্ট দিবেন। দেখা গেছে যে, কর্মকর্তারা পজেটিভ রিপোর্ট দেন ঠিক, তবে বাস্তবে এর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এ মিথ্যা রিপোর্ট দেন টাকার বিনিময়ে।
বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যে সব শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে তা হচ্ছে, ভবনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে প্রবেশ ও কাজ করার সুবিধার জন্য কমপক্ষে ১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে, ভবনের চারদিকে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা রাখতে হবে যাতে জরুরি প্রয়োজনের সময় নির্বিঘ্নে চলাচল করা যায়, ভবনে বাধামুক্ত অগি্ন নির্বাপণের জন্য ভবনের সামনে বৈদ্যুতিক ওভার হেড লাইন থাকা যাবে না, ভবনের আন্ডার গ্রাউন্ড অথবা বেইজমেন্ট ফ্লোরে বিশ হাজার লিটারের পানির জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে এবং অগ্নি নির্বাপণের জন্য সার্বক্ষণিক ৫০ ভাগ পানির মজুদ নিশ্চিত করতে হবে, জলাধারের মুখ ২০ ইঞ্চি ডায়া মিটার সম্পন্ন হতে হবে, অগ্নি নির্বাপণের জন্য ভবনের ছাদে একটি ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানির পাকা জলাধার সংরক্ষণ এবং এর ৫০ ভাগ পানি মজুদ নিশ্চিত করতে হবে, বজ্রপাত হতে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিরোধে ছাদে লাইটিং কন্ডাস্টার স্থাপন করতে হবে, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ অথবা পাওয়ার বোর্ড সিঁড়ি কোঠায় নিচে থাকবে, ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর হতে ছাদ পর্যন্ত চার ফুট চওড়া সিঁড়ি নির্মাণ করতে হবে, ভবনের প্রতি ফ্লোরে ৫৫০ বর্গফুটের জন্য পাঁচ কেজি ধারণ ৰমতা সম্পন্ন ১টি এবিসি ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার সম্পন্ন এক্সটিংগুইসার সংরক্ষণ করতে হবে এবং এর ব্যবহার বিধি লিখে রাখতে হবে, প্রতিটি রান্না ঘরের সামনে ১টি ও ভেতরে ১টি করে পাঁচ কেজি ধারণ ৰমতা সম্পন্ন এবিসি ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার সম্পন্ন এক্সটিংগুইসার সংরক্ষণ করতে হবে এবং এর পাশে ব্যবহার বিধি লিখে রাখতে হবে (যা অবশ্যই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দপ্তর কর্তৃক পরীক্ষিত হতে হবে)। এসব ব্যবস্থা ছাড়াও আরো কোনো প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরবর্তীতে বাস্তবায়ন প্রয়োজন হলে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত ভবনস্থলে সরজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে এসব শর্ত ঠিক আছে কি-না তা জানিয়ে রিপোর্ট দেবে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে।
এসব শর্ত শতভাগ পূরণ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে এমন একটি ভবনও পুরো জেলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাতে গোণা ২/১টি ভবনে উপরোক্ত শর্তের ২/১টি শর্ত হয়তো পাওয়া যেতে পারে। অথচ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর-এর উপ-সহকারী পরিচালকের কার্যালয় থেকে সকল ভবন নির্মাণের জন্য ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এ অফিসের কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। এমন বেশ কিছু প্রমাণও রয়েছে। হাজীগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলা ফায়ার সার্ভিস অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আছেন তারাও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলার কর্মকর্তার যোগসাজশে বাস্তবতা বিবর্জিত ক্লিয়ারেন্স দিয়ে থাকেন। চাঁদপুর উপ-সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে যার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর বর্তমান উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবিরের কাছে এ প্রতিবেদক কমপক্ষে ১০ বার যান এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্যে। যেমন- কী ধরণের ভবনে ফায়ার লাইসেন্স প্রযোজ্য, অগি্ন নির্বাপক যন্ত্র তথা ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহার বিধি শেখানের ব্যাপারে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি-না, নিয়ম ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি-না এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার তার কাছে যাওয়া হয়। প্রতিবারই তিনি বেশ চতুরতার সাথে নানা অজুহাত দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বিদায় করে দেন। একই ভূমিকা রাখেন তার অধিনস্ত কর্মকর্তা ফরিদ হোসেনও।