মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুরের পুরোনো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নব্বইর দশকে স্নাতক পর্যন্ত এ জেলার সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ছিলো। ৯০ দশকের পরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক সংগঠন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্দোলনের ফসল হিসেবে ধীরে ধীরে অনার্স কোর্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। পাশাপাশি ১৩টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। এছাড়াও আরও ৩টি বিষয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।
যারা এ প্রতিষ্ঠানে এ জেলার সন্তানদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে বা সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন, সেটিরও রয়েছে ব্যাপক সঙ্কট। বর্তমান চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে যেমনি রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে শিক্ষক সঙ্কট তেমনি রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে অবকাঠামোগত সঙ্কট। এ কলেজটিতে বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চলমান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ইসলাম শিক্ষা, দর্শন, অর্থনীতি, সমাজকর্ম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, উদ্ভিদ বিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও ভূগোল। আর মাস্টার্স কোর্স রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজকর্ম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন, গণিত, উদ্ভিদ বিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও ভূগোল। এই ১৩টি বিষয়ে স্থায়ী মাস্টার্স কোর্স চলমান রয়েছে। এবং ৩টি বিষয়ে যথাক্রমে ইসলামের ইতিহাস, ইসলাম শিক্ষা, এবং দর্শন বিষয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। অনার্স-মাস্টার্সের পাশাপাশি রয়েছে এইচএসসি’র সকল বিভাগ এবং ডিগ্রির সকল বিভাগগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এতোগুলো বিভাগ চালু থাকলেও যারা এসকল বিষয়ে বা বিভাগগুলোতে শিক্ষা দিবেন সেই শিক্ষক সঙ্কট দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বার বার মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করেও এর কোনো সুফল পাচ্ছে না এ প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে এ প্রতিষ্ঠানের ১৭টি বিষয়ে অনার্স স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে ১৬টি বিষয়ে মাস্টার্স ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রির শিক্ষা ব্যবস্তার সকল বিষয় থাকা সত্ত্বেও নেই অবকাঠামোগত ব্যবস্থা। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ের পাঠদানে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় শিক্ষকদের। এতে করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে যেমনি এ জেলার সন্তানরা বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষকরা তাদের শিক্ষাদানে পরিপূর্ণভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারছে না। বর্তমানে সরকারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুযায়ী এবং সরকার ঘোষিত পরিপত্র অনুযায়ী যে সকল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি, ডিগ্রি সকল বিভাগ, অনার্স ও মাস্টার্স চালু রয়েছে সেই সকল প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম প্রতিটি বিষয়ে ৭জন প্রভাষক, ২জন সহকারি অধ্যাপক, ২জন সহযোগী অধ্যাপক ও প্রতি বিষয়ের একজন করে অধ্যাপক থাকার নিয়ম থাকলেও সেটি যেন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে এই বিষয়ে কোনো মিল নেই। বর্তমানে চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে প্রভাষক পদে কর্মরত রয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২জন, বাকি ৩২ জন স্থায়ী। সহকারি অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন ১৭ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন ১৫জন আর অধ্যাপক মাত্র ১জন কর্মরত রয়েছেন। তাছাড়া ইতিমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসকল বিষয়ের জন্য ১০৩জন প্রভাষক, সহকারি অধ্যাপক, সহযোগি অধ্যাপক ও অধ্যাপক চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালে উক্ত মন্ত্রণালয়ে মাত্র ৩১ জন শিক্ষকের পদায়ন করে তার সংস্থাপন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বাকি ৭২টি পদে কবে নাগাদ উক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় পূর্ণ করবে তার কোনো হদিস নেই। আবার বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপকের পদে চারজন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েচে মাত্র ১জন। সহযোগী অধ্যাপক পদে ১৮জন কর্মরত তাকার কথা থাকলেও সেখানে কর্মরত রয়েছে ১৫জন। ৩জনের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারি অধ্যঅপকের কর্মরত থাকার কথা ২১জন, সেখানে কর্মরত রয়েছেন ১৭জন। শূন্য রয়েছে ৪জনের পদ। প্রভাষক পদে ৩৮জনের কর্মরত থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩৪ জন। বাকি ৪জনের পদ খালি। অর্থাৎ এককথায় চাঁদপুর জেলাসহ আশাপাশের জেলার আগামী প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন শিক্ষক সঙ্কটের কারণে অনেকটাই শিক্ষা প্রসারের ব্যাঘাত ঘটছে। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নিরূপায় হয়ে পড়েছে। শুধু শিক্ষক সঙ্কটই নয়, রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। এ দুটো সমস্যা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এখন চলছে কোনোরকমে।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষক সঙ্কটটি শুধু আমাদের একারই নয়, সারাদেশেই কমবেশি রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। তবে এ সঙ্কটটি সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে শিক্ষকদের পদোন্নতির কারণে। যেমন- ইতিমধ্যে অনেকেই প্রভাষক থেকে সহকারি অধ্যাপক আবার সহকারি অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছেন। এ কারণে এ সঙ্কটটি হঠাৎ করে বেশি হয়েছে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ১০৩ জন শিক্ষকের পদ চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে ৩১টি পদে শিক্ষক দিয়েছে, যা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, বাকি পদগুলো পূরণের জন্যে চেষ্টা চলছে। আশা রাখি, সহসাই এটি পূরণ হবে।
অবকাঠামোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে ২য়তলা থেকে ৩য়তলা করণ এমন দুটো বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দেড় কিলোমিটার বাউন্ডারীর কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্তির পথে। আরো ১১ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ অচিরেই করা হবে। এর মধ্যে মেয়েদের বা ছাত্রী নিবাসে একটি ভবন করা হবে। প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাম পরিক্ষা হল এমন আরো দুটো ভবন নির্মাণ খুব শিঘ্রই চালু হবে। তিনি খুব আনন্দের সাথে বলেন, বিগত মহাজোট সরকার ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ কলেজের উন্নয়নে যেমন শিক্ষক ও অবকাঠামো এ দুটো ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছেন। এজন্যে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
শিরোনাম:
সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৮ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।