প্রতিনিধি
অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শুরু হলো ট্রাকঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান।
গতকাল বুধবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান খান ও এনডিসি আমিনুর রহমান বিআইডব্লিউটির কর্মকর্তা ও পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ট্রাকঘাট এলাকায় চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছেদের খবর পেয়ে অনেকটা আনন্দিত হলেও তারা চিন্তায় পড়ে যান সম্পূর্ণ উচ্ছেদ প্রশাসনের কর্মকর্তারা করবেন কিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক�জন স্থায়ী বাসিন্দা জানান, এ এলাকায় ইট ও বালু ব্যবসায়ীরা আইডব্লিউটি অফিস থেকে শুরু করে ট্রাকঘাট এলাকা পর্যন্ত পুরো এলাকায় তারা ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিদিন উড়ন্ত বালুতে স্কুল ও কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের চোখ বন্ধ করে চলাফেরা করতে হয়। বালু ও ইট ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরকে ভয়ে কেউই কিছুই বলার সাহস পায় না। ওই এলাকা থেকে বালু ও ইট সরানোর জন্য জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় অনেকবার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। বেশ ক� বার উদ্যোগ নেয়া হলেও এতোদিন কোনো উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। অবশেষে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেনের দৃঢ় পদক্ষেপে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। সাধারণ ক�জন বালু ব্যবসায়ীর কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে বিআইডব্লিউটি ও ট্রাকঘাট এলাকায় সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ওই এলাকার পথচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো ক্ষতিকর এসব বালু ও ইট অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হোক। জেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় এসব অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরানোর জন্য ব্যবসায়ীদের নোটিসও করা হয় বহুবার। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় নোটিস প্রদান করে। সে নোটিসের আলোকে ওই এলাকার সকল ব্যবসায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে হাজির হন। কিন্তু তারা এতোদিনেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেননি।
প্রভাবশালী এসব ইট বালুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বালির কারণে জেলা খাদ্য গুদাম, স্থানীয় বাসা বাড়ি, চাঁদপুর ১শ� ৫০ মেঘাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিআইডব্লিউটি অফিস ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অপারেশন প্রকৌশলীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, বাতাসে অতিরিক্ত বালু থাকার কারণে বহুবার অনেক অর্থ ব্যয় করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফিল্টার পরিবর্তন করা হয়েছে। সীমিত সংখ্যক ব্যবসায়ীদের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ দিন দিন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
এনডিসি আমিনুল রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। যতোদিন পর্যন্ত শেষ না হবে ততোদিন এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পৌরসভাও সহযোগিতা করছে।
বন্দর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, সিএসডি গোডাউন থেকে শুরু করে বাগাদী রোডের শেষ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলে পৌরসভার সড়কের সীমানা বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় কাটা তারের প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের ১ মাস আগে মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এতোদিন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
পৌর কাউন্সিলর ডিএম শাহজাহান বলেন, গণমানুষের দাবি দীর্ঘদিন পর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি গুটি কয়েক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাধারণ জনতার স্বপ্ন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অন্যান্যের মধ্যে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আসুতোষ দত্তসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।