জিয়াউর রহমান বেলাল
স্বাধীনতা উত্তরকালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সমাজবদলের রাজনৈতিক আদর্শ এদেশের প্রগতিশীলমনা যুবকদের যেভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে সময় বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছিল। তার ফলে সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল ও তার সরকারকে আতংকগ্রস্থ ও ভয় পেয়ে দিয়েছিল। আজকে আর সে সময়কার জাসদ নেই। আজকের জাসদ বহুদা বিভক্ত। জাসদ বহুদা বিভক্ত হলেও এরই একটি বড় অংশ ক্ষমতাসীন দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সচল রাখা এবং মৌলবাদ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে যা আর বলার কোনো অবকাশ রাখে না। ১৪ দলের অন্যতম শরীক দলটির চাঁদপুর জেলা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এ বছরের ২২ জানুয়ারি, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদারকে সভাপতি এবং মোঃ মনির হোসেন মজুমদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব এমন এক ব্যক্তির ওপর অর্পিত হয়েছে যিনি বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিংবা ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জেলার নেতৃত্ব দানকারী এমন নেতা যিনি কিশোর জীবন এবং তৃনমূল অর্থ্যাৎ ছাত্রজীবন থেকে একই সংগঠনের আদর্শ নীতি ধরে রেখে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আছেন। অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ এবং শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সংগঠনের উচ্চপদস্থ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকরী ছাত্র নেতা খুব কমই আছেন; তিনি তাদের মধ্যে একজন তা বল্লে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।
চাঁদপুর জেলা জাসদের বর্তমান সভাপতি মোঃ হাছান আলী সিকদার, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, পুরানবাজার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চাঁদপুর । তিনি মতলব উত্তর ফরাজীকান্দি গ্রামের মরহুম পীরসাহেব আল্লামা শেখ বোরহানউদ্দীন (রাঃ) এর ভাতিজাপুত্র। বাল্যকালেই তার পিতা মারা যান। তার পিতার নাম মরহুম মোহাম্মদ আলী সিকদার। তার মা হলেন মতলব উত্তর ছোট হলদিয়া গ্রামের মরহুম মাওলানা আরব আলী হুজুরের চাচাতো ভাইয়ের কণ্যা সাহিদা খাতুন। তিনি বাল্যকাল থেকেই সৎচরিত্রবান এবং অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় খুবই পরিচিত ছিলেন। তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বৃত্তিধারী ও বরাবরই শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র ছিলেন। চাঁদপুর জেলাধীন মতলব উত্তর উপজেলার নাউরী আহম্মদীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি প্রথম বিভাগে পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সে সময় মরহুম পীর সাহেব আল্লামা শেখ বোরহানউদ্দীন (রাঃ) এর জ্যেষ্ঠ পুত্র মরহুম পীর সাহেব আল্হাজ্ব মন্জুর আহমেদ (রাঃ) এর ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসায় থেকে পড়াশুনা করতেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: রাজনৈতিক কারনে তাকে তাঁর বাসা এবং ঢাকা কলেজ ছাড়তে হয়েছে। পরবর্তীতে কয়েক বছর শিক্ষায় বিরতি দেয়ার পর ঢাকা আইডিয়েল কলেজে মানবিক বিভাগে এইচ.এস.সি-তে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে এইচ. এস.সি পাশ করে ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন এবং ঐতিহ্যবাহী স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হন। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণীতে ৫ম স্থান (ছেলেদের মধ্যে) লাভ করে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন এবং মাস্টার্সেও সন্তোষজনক নম্বরসহ ২য় শ্রেণী প্রাপ্ত হয়ে উত্তীর্ণ হন।
তখন ছিল এরশাদ শাসনামল। তিনি হলে অবস্থান করার মধ্য দিয়ে আবার সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও সামাজিকতা এবং তার গ্রহণযোগ্যতার কারণে মাত্র দু’বছরের মধ্যে জাসদ ছাত্রলীগ (শিরিন-মোশতাক) এর হল শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাধারণ সম্পাদক থাকা কালেই দু’বছর পর হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। হল শাখার সভাপতি থাকা কালে ১৯৮৯ সালে প্রায় ৮ বছর পর ঢাকসু অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের ঢাকসু-এর প্যানেল ছিল (সুলতান-মোশতাক) পরিষদ। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল সংসদ-এর ভি.পি অর্থাৎ সহ-সভাপতি পদে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। মাত্র তিন ভোটে তিনি পরাজয় বরণ করেন। কিন্তু সে সময় তাদের পূর্ণ প্যানেল জয়ী হয়েছিল। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সে সময় উক্ত হলে তাদের ছাত্র সংগঠনটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। পরবর্তীতে তিনি জাসদ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৮৯-১৯৯০)। তখন সারাদেশে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামী ছাত্র নেতা হিসেবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান এবং ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা হিসেবে ছাত্রদের মাঝে তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন। ছাত্র জীবন শেষ করার সাথে সাথে তিনি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়েন।
অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি এম.এড লাভ করেন। প্রথমে ১৯৯০ এর ডিসেম্বর মাসে তিনি বি.সি.আর.জি ডিগ্রি কলেজ, পাকুটিয়া, টাঙ্গাইলে যোগদান করেন। পরে নিজ জেলা চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে যোগদান করে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সুনামের সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি একজন সাধারণ নেহায়েত শিক্ষকই নন একজন শিক্ষক নেতাও বটে। তার পেশাগত সাংগঠনিক পরিচিতিও রয়েছে যা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগদান থেকে শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বি.সি.আর.জি ডিগ্রি কলেজে থাকাকালীন টাঙ্গাইল জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সহ-সাধরণ সম্পাদক-এর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একদিকে ১৯৯৮ সাল থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস), চাঁদপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চাঁদপুর জেলা কলেজ শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে শিক্ষকদের পেশাগত দাবি আদায়ের সংগ্রাম কমিটির চাঁদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক। এসব সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের পেশাগত দাবি ও শিক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে জোরালো ও বলিষ্ঠ সংগ্রামী ভূমিকা রেখে আসছেন। যার ফলে তিনি চাঁদপুর জেলার শিক্ষকদের মাঝে অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক নেতা হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
পেশাগত সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট এর আজীবন সদস্য এবং দু’ দু’দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদ প্যানেল এর চাঁদপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। অন্যদিকে তিনি একাধারে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এর আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি (বারাস) এর আজীবন সদস্য ও কার্যনির্বাহী পরিষদেরও সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সমিতির আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস.এম.হল অ্যালামনাই সমিতির আজীবন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ অ্যালামনাই সমিতির আজীবন সদস্য এবং বাংলা একাডেমির সদস্য যার নম্বর-২৭৭৪।
পরিশেষে, আমরা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আশা করতে পারি, এ রূপ উচ্চ শিক্ষিত আদর্শবান যোগ্য নেতৃত্বের দ্বারা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল চাঁদপুর জেলা জাসদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে নিকট ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে চাঁদপুর জেলা জাসদ ১৪ দলের অন্যতম শরীক দল হিসেবে যথাযথ রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করে জনগণের কাঙ্খিত রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২২ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।