জুনেই শেষ হচ্ছে মেয়াদ
অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা ৫৩৬ প্রকল্পে
বাজেট ২০২৩-২৪: ১৫ বছর ধরে চলছে ১টি, ১৩ বছরের ১টি, ১২ বছরের বেশি সময়ের ৩টি, ১১ বছরের ২টি, ১০ বছরের ৬টি এবং ৯ বছরের ৬টি প্রকল্প
জুনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি কিংবা সংশোধন কোনোটিরই উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
এ অবস্থায় ৫৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড় ও ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
নতুন অর্থবছরের প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে এক টাকাও খরচ করা যাবে না। পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
তবে প্রকল্পগুলো যাতে বেঁচে থাকে অথবা বিনিয়োগ হওয়া অর্থের অপচয় ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এ
ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রকল্প বিশেষ চিহ্ন (স্টার) দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘স্টার’ চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি ছাড়া অর্থছাড় ও ব্যয় করা যাবে না।
এছাড়া এডিপি তৈরির নীতিমালায় বলা হয়, যেসব প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৩ শেষ হবে সে সব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার রোববার যুগান্তরকে বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রকল্প যথাসময়ে শেষ না হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ, দরপত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগাসহ অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দক্ষতার অভাব।
আমরা এ ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তবে এরই মধ্যে বেশকিছু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন এসেছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জুন পর্যন্ত তারা টাকা খরচ করতে পারবে। তবে ১ জুলাই থেকে কোনো টাকা খরচ করতে পারবে না। যতদিন এসব প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়বে ততদিন অর্থছাড় বন্ধ থাকবে।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি বলেই অর্থ ব্যয় স্থগিত করতে হয়েছে। এটা অবশ্যই প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা।
এছাড়া মনিটরিংয়ের অভাব এখানে বড় সমস্যা। কেননা প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কঠোর মনিটরিং থাকলে এমনটা হওয়া কথা নয়। এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়, মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে তদারকির বিকল্প নেই।
সূত্র জানায়, ১১ মে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় আগামী অর্থবছরের এডিপি উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে এসব প্রকল্পের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
এ সময় বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪-৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ খরচ করা সম্ভব হয় না।
ফলে এডিপির বরাদ্দ ব্যবহার কম থাকে। সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের সব প্রক্রিয়া ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন। যাতে জুলাই থেকে কাজ করা যায়।
প্রকল্পগুলো বিশেষ চিহ্ন (তারকা) দিয়ে নতুন এডিপি যুক্ত করা হলেও যতদিন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি না হবে ততদিন অর্থছাড় বা ব্যয় করা যাবে না। এ প্রস্তাবে সায় দেয় এনইসি।
৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে এরকম ৫৩৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৫ বছর ধরে চলমান আছে একটি প্রকল্প। এছাড়া ১৩ বছর ধরে চলমান আছে একটি। এক যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে চলছে তিনটি, ১১ বছর ও তার বেশি দুটি, ১০ বছর ও তার বেশি সময়ের পাঁচটি এবং নয় বছর ও তার বেশি সময় ধরে চলছে ছয়টি প্রকল্প।
আরও আছে আট বছরের নয়টি, সাত বছরের ১৯টি এবং ছয় বছরের ২৭টি, পাঁচ বছরের ৮৮টি এবং সাড়ে চার বছর ও তার বেশি সময় ধরে চলছে ১০৫টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প গড়ে দুই থেকে চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১৫ বছর ধরে চলছে ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পটি। ২০০৭ সালে হাতে নেওয়া হয় এটি। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই তিনবার সংশোধন করা হয়েছে। ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদও। কিন্তু শুরু থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকার মতো।
আগামী অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া আসছে ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হচ্ছে ‘বিসিক শিল্পপার্ক সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্পের।
ফলে চার বছরের এ প্রকল্প ঠেকছে ১৩ বছরে। খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে ৩ বার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় এর মেয়াদ নির্ধারণ ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। বিভিন্ন সময় দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
সেটিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তালিকায় থাকা আরও কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড (পতেঙ্গা হতে সাগরিকা পর্যন্ত) উন্নয়ন। রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ।
রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন এবং নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ প্রকল্প