চাঁদপুরে ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে আলুর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপণকৃত আলু বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ফলে একদিকে আলু উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত, অপরদিকে হাজার হাজার টাকা ধার দেনা করে লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকগণ হতাশ হয়ে পড়েছেন। এতে অসময়ের বৃষ্টিতে আলু চাষীদের স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতে যেনো ধূসর হয়ে গেছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৯২ হেক্টর জমির আলু বীজ এখন পানির নীচে। যদি রবি সোমবার থেকে টানা রোদ হয় তাহলে আলু বীজ কিছুটা রক্ষা হবে। তবে চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃষ্টি যদি আরো ক’দিন হয় তাহলে আলু চাষী কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।
চাঁদপুর জেলায় এবার (২০১৯-২০) অর্থ বছরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২৪ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে।
চাঁদপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সদরে এবার আলু চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮শ’ মেট্টিক টন। মতলব উত্তরে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭শ’ মেট্টিক টন। মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৫শ’ মেট্টিক টন । হাজীগঞ্জে ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫০ মেট্টিক টন। শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ মেট্টিক টন। কচুয়ায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৫শ’ মেট্টিক টন। ফরিদগঞ্জে ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ মেট্টিক টন। হাইমচরে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬২৫ মেট্টিক টন।
বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলার নীচু এলাকা। সেখানে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। পানির নীচে রয়েছে ৩শ’ হেক্টর আলু বীজ।
এছাড়া চাঁদপুর জেলা সদরে ৩শ’ হেক্টর জমির আলু বীজ পানির নীচে রয়েছে। এ বছর কচুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে।
অসময়ের বৃষ্টির পানি জমে রোপণকৃত আলুর বীজ ও প্রয়োগকৃত সার সবই বিনষ্ট হয়ে গেছে। কেবলমাত্র বীজই বিনষ্ট হয়েছে ৬ লাখ টাকা উপর। এ ছাড়া ইরি বোরো ধানের বীজতলা, করলা, ধনিয়া, মুলা, লালশাক, মরিচ, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আলুর জমি থেকে পানি সরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আলুর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পর পর ২ বছর আলু চাষে বৃষ্টির কারণে ধস নেমেছিল। এ বছর আলু চাষে অধিক ফলন উৎপাদনের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেবার কথা ছিলো। কিন্তু তাতে বাগড়া দিলো অকালের বৃষ্টি।
চাঁদপুর সদরের মহামায়া গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস জানান, আমি ২ কানি (২শ’ ৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ নীচু জমি। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই ঘুম নেই। জমিনের আইলে আইলে আছি। যদি আল্লাহ রক্ষা করেন। এ কৃষক আরো জানান, গত বছর আলুর ভালো ফলন হয়েছিল কিন্তু আলু মাঠে থাকতেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ করে দেয়। তার পরেও লাভ হয়েছে।
হাজীগঞ্জের কাজীরগাঁও মাঠে গেলে দেখা যায়, আলু ক্ষেতে ড্রেন করছেন কৃষক মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, ৩ কানি আলু চাষ করেছি। সবগুলো আলু ক্ষেতেই পানির নীচে ড্রেন করে পানি বের করার চেষ্টা করছি।
এ কৃষক অভিযোগ করেন, জমিনে আলু রোপণ করেছি ১ মাস হয়েছে। এর মধ্যেই বৃষ্টি। কিন্তু কোনো কৃষি কর্মকর্তা বা তাদের প্রতিনিধি আমাদের পরামর্শ দিতে আসেনি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলার কোথাও কৃষকদের সহযোগিতার জন্যে মাঠে সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবদুর রশিদ জানান, এ বছর আলু চাষের প্রথম মৌসুমে ২/৩ দিন বৃষ্টি হওয়ায় আলু বীজ রোপণে কিছুটা দেরী হয়েছে। কোথাও গাছের চারা উঠেছে কোথাও এখনো উঠেনি। আবার কোথাও কোথাও এখনো আলু বীজ রোপণ করছে।
তিনি বলেন, অঝোর ধারা টানা বৃষ্টিতে কৃষকরা সমস্যায় পড়বে। তিনি পরামর্শ দেন যদ্দুর সম্ভব, জমিতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখা। বিশেষ করে যেসব আলু বীজের গাছ বড় হয়েছে তাদের অবশ্যই সেচ ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি দ্রুত সময়ে বৃষ্টি চলে যায়, তাহলে ভালো। আর যদি বৃষ্টি আরো কয়েক দিন থাকে তাহলে কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।