চাঁদপুর:
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে উৎপাদিত হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই দেখার যেনো কেউ নেই
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন বেকারী ব্যবসায়ী ও অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী নেমে পড়েছেন সেমাই তৈরিতে। এ সকল ব্যবসায়ী বিএসটিআই-এর অনুমোদন না নিয়ে এবং স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতির প্রতি লৰ্য না রেখে তৈরি করছে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে সেমাই। এ সকল সেমাই প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বাজারজাত করা হচ্ছে নির্বিঘ্নে। যেনো দেখার কেউ নেই।
বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া এ সকল নিম্নমানের সেমাই খেয়ে মানুষের চরম বিপত্তি ঘটে। পেটের রোগসহ নানা রোগে আক্রানত্দ হয়। খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রশাসন আনত্দরিক হলেও অনেক ৰেত্রেই তা অকার্যকর হয়ে পড়ে কিছু ব্যক্তির কারণে। ঈদকে সামনে রেখে সেমাই কারখানায় সেমাই তৈরি চলছে। অথচ অনেক কারখানায় নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার শ্রমিকরা খালি গায়ে ময়দার খামির হাত ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরিতে ব্যসত্দ। আর কারখানাতে যে দিন থেকে লাচ্ছা সেমাই তৈরি শুরু হয় সে দিনের উদ্বৃত্ত তেলের সাথে যোগ করেই শেষ দিন পর্যন্ত চলে লাচ্ছা সেমাই তৈরির কাজ। পোড়া তেল ব্যবহারে তৈরি খাদ্য সামগ্রী স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ৰতিকর।
চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায়ই ভেজাল এ লাচ্ছা সেমাই তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁদপুরে যে সমসত্দ বেকারীতে এ ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরি হচ্ছে সেগুলো হলো ঃ মৈশাদীর হারুন বেপারী, বাবুরহাট বিসিক শিল্প নগরীর চাঁদ বেকারী, মেট্রো ব্রেড, আলম বেকারী, মুনি্ন বেকারীর পাঁচতারা, পূবালী ও রূপালী। এ সমসত্দ বেকারীর শ্রমিকরা দিনে বেশি কাজ না করলেও ঊর্ধ্বতন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে নির্ভয়ে সেমাই তৈরি করে যাচ্ছে। আর তাদেরকে সবচে’ বেশি সহযোগিতা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা। বিভিন্ন শ্রমিকের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, রাসায়নিক প্রক্রিয়া, নিষিদ্ধ রেবসিড, নিম্নমানের পামওয়েল, ক্যান্সার ও কিডনি রোগ সৃষ্টিকারক কেমিক্যাল, মেয়াদোত্তীর্ণ বাটার অয়েল দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। এসব সেমাই ঝুড়ির মধ্যে পলিথিন মুড়িয়ে কেজি হিসেবে বাজারজাত করছে অধিক মূল্যে। রমজানের ১০ দিন আগ থেকেই ঠিকাদারের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার বিশেষ করে শিশুরা এ সেমাইয়ের কাজ করে বেশি।
বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, শিশুসহ শ্রমিকগণ ভোলা, বরিশাল, লালমোহন, পিরোজপুর, ঝালকাঠি থেকে আসা। অধিকাংশ লাচ্ছা সেমাই কারখানার কোনো অনুমতি নেই। বিস্কুট এন্ড বেকারীর নামে এসব সেমাই কারখানা চলমান রয়েছে। চাঁদপুরের বেকারীগুলো সারা বছরের বাণিজ্য করতে রমজান ও ঈদে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছে যত্রতত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেমাই কারখানাগুলোর উৎপাদিত সেমাই বিএসটিআই-এর অধীনে জমা দিয়ে মালিক একটি রসিদ সংগ্রহ করে। এ রসিদই সেমাই কারখানা মালিকদের মূল চালান কিংবা বিএসটিআই-এর অনুমোদন বলে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দেখিয়ে থাকেন।
পুরাণবাজার-নতুনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ক’জন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী রমজানের অনেক আগ থেকেই বেকারী মালিকদের কম রেটে মাল ক্রয় বাবদ তাদের টাকা প্রদান করেন। আর যখন সেমাই প্রস্তুত শুরু হয় তখন বাজারে যাবার আগেই তারা দাম নির্ধারণ করে নেন। এসব ব্যবসায়ী অল্প কিছু টাকা বেকারীর মালিকদের দিয়ে ঈদ ঘনিয়ে আসলে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন।
চাঁদপুরের সাধারণ সচেতন মানুষের দাবি, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেনো অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরিকৃত সেমাই ফ্যাক্টরীগুলোতে নজর দেয়। ফ্যাক্টরীগুলো যদি ভালো মানের সেমাই উৎপাদন করে তাহলে মানুষ অনেক রোগ থেকে বেঁচে যাবে।