পেটের কোনো সমস্যাই সুখকর নয়। তবে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো খুবই বিরক্তিকর এবং কষ্টদায়ক। যেমন ঠিকমতো পায়খানা না হওয়া কিংবা বেশি বেশি পেট খারাপ হওয়া। চিকিৎসকরা পেটের এ সমস্যার নাম দিয়েছেন আইবিএস বা ইরিট্যাবল বাওয়েল সিনড্রোম। কবিরাজ ভাই এবং তাদের অনুগতরা অবশ্য একে পুরনো আমাশয় বলে থাকেন। এ রোগটি থেকে মুক্তি পেতে আজকের লেখার সাহায্য নিতে পারবেন। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রমতে আই বি এস এক ধরণের রোগ, যা অন্ত্রের দীর্ঘ মেয়াদি বৈকল্য। আর হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্র অনুসারে এ হল কতগুলো লক্ষণের সমষ্টি। সাধারণত পেটে এক ধরণের ঘিনঘিনে ব্যথা হিসাবে প্রথম দিকে রোগীকে আই বি এস এর জানান দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত এককভাকে কোনো কিছুকে আই বি এস রোগের কারণ হিসাবে দায়ী করা সম্ভব হয়নি। সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারী এবং অস্থির প্রকৃতির নারী-পুরুষের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা দেখা যায়।
এ রোগে রোগীর পেটের নীচের অংশের ডান বা বাম দিকে অথবা মাঝখানে ব্যথা, সেই সঙ্গে ঘন ঘন নরম মল ত্যাগের প্রবণতা অথবা দীর্ঘ মেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য আই বি এস এর প্রথম দিকের লক্ষণ
সাধারণত সকালের দিকে বা কোনোরূপ মানসিক উত্তেজনা দেখা দিলে রোগী মল ত্যাগের চাপ অনুভব করেন। এ ছাড়া কোনো আহার না করা সত্ত্বেও পেট ভরা থাকার অনুভূিিত, পেটের মধ্যে ভুট-ভাট শব্দ হওয়া, অতিরিক্ত বায়ূ ত্যাগ করা, মলত্যাগের পরও মলদ্বারে পূর্ণতার অনুভূতি ইত্যাদি এ রোগীর মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
রোগের লক্ষণঃ
• তলপেটে ব্যথা হয়। ব্যথা মোচড় দিয়ে শুরু হয় এবং পায়খানা করার পর ব্যথা কমে যায়।
• পেটের মধ্যে সারা দিন বুদবুদ আওয়াজ হতে থাকে। মনে হয় পেটের মধ্যে গ্যাস ভরে আছে।
• কখনো পাতলা পায়খানা, কখনো কষা পায়খানা (কনস্টিপেশন) হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সব সময় পাতলা পায়খানা বা কষা পায়খানা হয়।
• যাদের সব সময় পাতলা পায়খানা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে পেটে ব্যথা হয় এবং পরে পাতলা পায়খানা হওয়ার পর তা কমে আসে। ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় এবং প্রতিবার খুব অল্প পরিমাণে পায়খানা হয়।
• ঘুমের মধ্যে সাধারণত কখনোই পায়খানার বেগ হয় না।
• পায়খানার সময় প্রচুর পরিমাণে আম বা মিউকাস যায়। আম যায় বলে অনেকে অজ্ঞতাবশত একে আমাশয় বলে।
• যাদের কষা পায়খানার প্রবণতা বেশি তারা পেটে ব্যথা নিয়ে টয়লেটে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও অতৃপ্তি নিয়ে টয়লেট থেকে বের হতে হয়।
• পায়খানা সমস্যা থাকলেও এসব রোগীর ওজন তেমন হ্রাস পায় না।
• পায়খানার সমস্যার পাশাপাশি এসব রোগীর ক্ষুধামন্দা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মাথা ব্যথা, পিট ব্যথা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থাকতে পারে।
রোগের কারণ
প্রায় ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগটি মানসিক কারণে হয়ে থাকে। সকালে বাথরুম সেরে অফিসে যাওয়ার জন্য প্যান্ট-শার্ট পরেছেন অমনি দেখা যায়, তলপেট মোচড় দিয়ে ব্যথা ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে দৌড়। দূরে কোথাও যাবেন তাই বাসে উঠেছেন। যখন মনে হবে বাসে তো বাথরুম করার সুযোগ নেই অমনি দেখবেন তলপেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। প্রস্রাব-পায়খানা যতোই পরীক্ষা করান না কেন এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা পাওয়া যাবে না। যারা সবসময় দুশ্চিন্তায় ভোগেন, স্ট্রেস যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পুকুরে ঢিল ছুড়লে পানি যেমন তরঙ্গের আকারে পাড়ের দিকে এগিয়ে যায়, পেটের নাড়িভুড়িও তেমনি তরঙ্গের আকারে খাদ্যজাত বর্জ্য পদার্থ পায়খানার আকারে বের করে দেয়। অন্ত্রের সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে এ গতিময় তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। কোনো কারণে এ সংকোচন প্রসারণের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাতলা পায়খানা এবং কমে গেলে কষা পায়খানা হতে পারে।
কিছু মানুষ আছে যারা সামান্য কথাতেই মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তেমনিভাবে কোনো কারণে অন্ত্রের সংবেদনশীলতা বেড়ে গেলে ঘন ঘন পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্ত্রের প্রদাহের কারণে অনেকের ঘন ঘন পায়খানার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া দুগ্ধজাত খাবারসহ অনেক খাবার আছে যেগুলো অনেকে হজম করতে পারে না। আইবিএস তাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে বিশেষ কোনো রোগ নয়, রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। হোমিওপ্যাথিতে এ ধরণের রোগীর চিকিৎসা সফলতার সঙ্গেই সম্পন্ন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে রোগীকে অভিজ্ঞ একজন হোমিওপাথের পরামর্শ নিতে হবে। তবে মূল কথা হল, এসব ঔষধ ছাড়াও রোগীর ধাতুগত লক্ষণ অনুসারে প্রযোজ্য ঔষধ প্রযোগে আই বি এস এর লক্ষণ যুক্ত রোগীর চিকিৎসা করতে হবে।
এ রোগের চিকিৎসায় প্রথম কথা হলো রোগীকে অভয় দেয়া, সাহস যোগানো। রোগীকে বোঝাতে হবে এটা খুবই সাধারণ একটা সমস্যা। এতে ভয়ের কিছু নেই। টেনশনমুক্ত জীবনযাপন করলে, আত্মবিশ্বাস বাড়ালে এবং খাবারের বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
যাদের পাতলা পায়খানা বেশি হয় তারা অবশ্য শাক-সবজি বা ফাইবার জাতীয় খাবার খুব কম খাবেন।
****************************************************************
প্রভাষক.ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,চাঁদপুর
01711-943435
ইমো 01919-943435
চাঁদপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
ইমেইল- dr.zaman.polash@gmail.com
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com