শওকত আলী॥
চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো ৩ দিন ব্যাপী চাঁদপুর জেলা ইজতেমা শনিবার দুপুরে লাখো মুছল্লির উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ও আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে জেলা ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও কাকরাইল তাবলিক জামাতের প্রধান আমির হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ।
এতে আল্লাহর কাছে নিজেদের ক্ষমা প্রার্থনাসহ দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া আল্লাহ কাছে বলা হয় সকল, মুসলমানদের ইমান-আমল হেফাজত করে দেন এবং মুসলমানদের সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার জন্য খোদার দরবারে প্রার্থনা করেন। তিনি বাতেনদের রাস্তা বন্ধ করে হকের রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্যও খোদার কাছে প্রার্থনা করেন। খোদার কাছে সকল মুসলমানদের হেফাজত করার জন্য ও হালাল রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বিশেষ মুনাজাত করেন। শনিবার বাদ ফজর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বয়ান করেন, কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা আবদুর রশিদ।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর )বাদ ফজরের পর থেকে তাবলিক জামাতের মুরুবীরা ধর্মীয় বয়ানের মাধ্যমে এ ইজতেমা শুরু করেন। শুক্রবার ইজতেমার ২য় দিনে লাখো মুছল্লির উপস্থিতির মধ্য দিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেছে,চাঁদপুর জেলাসহ আশ পাশের জেলার লাখ-লাখ ধর্মপ্রান মুসলমান। মেঘনা নদীর পাড়ে আল্লাহ-আল্লাহ- আল্লাহ ধবনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ইজতেমা এলাকা। গত বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর থেকে ৩দিন ব্যাপী এ ইজতেমা শুরু হলেও ইজতেমা মাঠে তেমন লোক সমাগম দেখা যায়নি। শুক্রবার ফজর নামাজের পর সকাল থেকে জুম্মার নামাজের পূর্বক্ষন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ-লাখ ধর্মপ্রান মুসলমানদের ঢল নামতে দেখা যায়। এতে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। শুক্রবার এ আঞ্চলীক বিশ^ ইজতেমা মাঠের জুম্মান নামাজের ইমামতি করেন, ঢাকা কাকরাইল তাবলিক জামাতের মুরুবী বিশিস্ট আলেমেদীন হযরত মাও: জোবায়ের আহমেদ চাঁদপুর জেলা শহরের শত-শত মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে জামাত আকারে শত-শত ধর্মপ্রান মানুষেরা একত্রিত হয়ে ইজতেমা মাঠে যোগদান করেন। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে একত্রিত হয়ে এ জামাতে অংশ গ্রহন করেন। চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলা ছাড়া ও পার্শবতী কুমিল্লা,নোয়াখালী,লক্ষীপুর,শরীয়তপুর,ফরিদপুর,মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষেরা এ চাঁদপুর জেলা ইজতেমায় অংশ গ্রহন করেন। তাবলিগের মুরুবিদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, এ ইজতেমার উদের্শ হচেছ,এ ইজতেমায় অংশ গ্রহনকরা লক্ষ-লক্ষ মানুষের ঈমান ও আমল কি ভাবে মজবুত হয় তার প্রচেষ্ঠার জন্য এ বিশ^ ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে বৃহস্পতিবার ফজর নামাজের পর থেকে দিন-দুনিয়া ও আখরাত সর্ম্পকে বিভিন্ন বয়ান করেন ঢাকা কাকরাইলের তাবলিক জামাতের মুরুবিরা। এখানে চাঁদপুর জেলা ছাড়া ও বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষ-লক্ষ ধর্মপ্রান মুসলমানরা এসে সমবেত হন। চাঁদপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর পাড়ে প্রায় ৬৭ একর বিশাল জায়গার উপর এ আঞ্চলীক জেলা ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ইজতেমার পুরো জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিলেন, মাওলানা মো: আবদুল রশিদ তালুকদার,মাঠের জিম্মাদারে দায়িত্বে ছিলেন,মো: আরিফ উল্লাহ হাজীও মাঠে তাৎক্ষনিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্বে ছিলেন,হযরত মাও: হাফেজ মুফতি মো: সিরাজুল ইসলাম।
প্রতিদিন ফজর, যোহর, আছর ও মাগরিব বাদ মানুষের ঈমান ও আমল কি ভাবে মজবুত করা যায় সে প্রচেষ্ঠায় বয়ান করা হয়। ৩ দিনব্যাপী এই আঞ্চলিক ইজতেমায় প্রায় ৩-লাখ মুসল্লির সমাগম হয় বলে আয়োজকরা জানান।
এ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাবলিগের নিজস্ব সহস্বাধিক সাথীদের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন র্যাব, পুলিশ, ডিবি, ডিএসবি ও এসএসএফ এর প্রায় ৪ শতাধিক নিরাপত্তা সদস্য ইজতেমা মাঠে নিয়মিত থেকে এ ইজতেমা সম্পন্ন করেছেন বলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় লোক সমাগম কমাতে বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় তাবলিগের মুরব্বিদের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো চাঁদপুর জেলা ইজতেমা। ইজতেমায় মুসল্লিদের থাকার জন্য প্যান্ডেল নির্মাণে স্বেচ্ছায় কাজ সম্পন্ন করেছেন প্রায় সহ¯্রাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। এ ছাড়া বিদেশী মেহমানদের থাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথিদের থাকার জন্য আলাদা প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগত মুসল্লিদের অজু, গোসল ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরী করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে জেলার ৮ উপজেলার নির্ধারিত মুসল্লিসহ লাখ-লাখ মুসল্লী অংশ গ্রহন করেন। একই সাথে আশপাশের বাড়িতে নারীদেরও আখেরি মোনাজাতে অংশ গ্রহন করতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩০) নভেম্বর ইজতেমা শুরু হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার পুরাণ বাজার জাফরাবাদ গ্রামে মেঘনা নদীর পাড়ে।