গোলাম মোস্তফা
৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার ঘোষিত ৩য় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তফসিলে আগামী ১৫ মার্চ জেলার দুটি উপজেলা যথাক্রমে হাজীগঞ্জ ও কচুয়া এবং ৪র্থ দফায় ঘোষিত তফসিলে জেলার একমাত্র শাহরাস্তি উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা রিটার্নিং অফিসার এ তিনটি উপজেলার নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। আর প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে তাদের বিজয়ের লক্ষ্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে দিন-রাত অবিরাম গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ তিনটি উপজেলায় মোট ভোটার ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ’ ২৯। মোট ভোট কেন্দ্র ২২৯টি। মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৫২০টি। এদিকে এ তিনটি উপজেলায় দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কোনো কোনো উপজেলায় দলের সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বিদ্রোহী প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কারণে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও স্থানীয় জনগণের বা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপের কারণে অনেক ক্ষেত্রে দল পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
আগামী ১৫ মার্চ জেলার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত হাজীগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন নিয়ে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩শ’ ৩২। এতে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ৫শ’ ২২ জন। আর মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮শ’ ১০ জন। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি। মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫শ’ ১৫টি। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অর্থাৎ গত নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পুরস্কার প্রাপ্ত অধ্যাপক আবদুর রশিদ মজুমদার। তার প্রতীক আনারস। বিএনপি সহ ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম। তার প্রতীক দোয়াত-কলম। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলার ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের মোতওয়াল্লি দেশখ্যাত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারী। তার প্রতীক কাপ-পিরিচ। যদিও তিনি বিএনপিমনা হিসেবে উপজেলার ভোটারদের কাছে বেশ পরিচিত। এ প্রার্থী হাজীগঞ্জ উপজেলার জনগণের কাছে একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে বেশ সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া ইসলামের বা মুসলমানের ইবাদতের প্রধান স্থান হচ্ছে মসজিদ। আর সেই হিসেবে এ পবিত্র স্থানের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের তিনি মোতওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। সেই হিসেবে মুসলমান অধ্যুষিত হাজীগঞ্জ উপজেলার জনগণ ধর্মভীরু। একই সাথে ধর্মের প্রতি অনুরাগী বিধায় ভোটারদের দুর্বলতা তার পক্ষে রয়েছে অনেকাংশেই। যার ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর প্রতীক আনারস ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীর প্রতীক দোয়াত কলম আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থীর প্রতীক কাপ পিরিচ এ ৩টি প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে হবে এটি প্রায় নিশ্চিত। কেউ কারো চেয়ে কম নয় বলে স্থানীয় জনগণ বা ভোটাররা জানাচ্ছেন।
কচুয়া উপজেলার নির্বাচনও আগামী ১৫ মার্চ। এ উপজেলায় প্রধান দুটি দলের সমর্থিত প্রার্থীর বাইরেও চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নির্বাচনী এলাকা। এ এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার ২শ’ ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৯৪ জন। আর মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ১শ’ ৯৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৩টি। আর মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬শ’ ১২টি। উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত চূড়ান্ত প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শাহজাহান শিশির প্রতীক কাপ পিরিচ। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩নং বিতারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য প্রথম ঘোষিত দলীয় প্রার্থী মোঃ ইসহাক সিকদার। প্রতীক আনারস। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আবদুর জব্বার বাহার মোটর সাইকেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হুমায়ুন কবির দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কচুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল প্রধান টেলিফোন প্রতীক। একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান পাঠান চিংড়িমাছ প্রতীক নিয়ে। যদিও উপজেলায় গুঞ্জন রয়েছে তিনি সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন সমর্থিত গ্র“পের চেয়ারম্যান প্রার্থী।
উল্লেখিত ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবে ৪ জন প্রার্থী। এরা হচ্ছেন শাহজাহান শিশির কাপ-পিরিচ, ইসহাক সিকদার আনারস, শাহজালাল প্রধান টেলিফোন ও মিজানুর রহমান পাঠান চিংড়ি প্রতীক। উপজেলাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, এ ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত ও বিদ্রোহী এ দুপ্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা চূড়ান্ত লড়াই হবে। এক্ষেত্রে জয়ের মালা এ দু’জন প্রার্থীর যে কোনো একজনের গলায় উঠতে পারে।
৪র্থ দফায় ঘোষিত তফসিলে জেলার একমাত্র শাহরাস্তি উপজেলার নির্বাচন হবে আগামী ২৩ মার্চ। এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে নির্বাচনী এলাকা। এখানে নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা মাত্র ৫৭টি। আর ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৯৩টি। মোট ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৪জন। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৬৮ হাজার ১শ’ জন। আর মহিলা ভোটার রয়েছেন ৭২ হাজার ৯শ’ ৪। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও টামটা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদার। তার প্রতীক কাপ পিরিচ। আর দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদুর রহমান বাঙালি। তার প্রতীক হচ্ছে ঘোড়া। ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী। তার প্রতীক আনারস। যদিও ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থী বলে প্রচারণায় একমাত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মিয়াজীর নাম রয়েছে জোটেরই অংশীদার কল্যাণ পার্টি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মোঃ জিলান মিয়া জোটের প্রার্থীর বাইরে দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে তাকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়া হয়েছে।