:একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় যে কোন সময় কার্যকর হতে পারে।একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় আসছে ঘন ঘন। সঙ্গত কারণেই জামায়াতের দেয়া হরতালের কবলে বাংলাদেশ।নিরুত্তাপ হরতালে জামায়াতের আগের মতো নাশকতা বা পিকেটিং না থাকলেও দলের শীর্ষ নেতার প্রতি সম্মান জানাতেই এই হরতাল দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে ।
রায় কার্যকর প্রসঙ্গ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, কামারুজ্জামানের রিভিউ পিটিশনের কোনো সুযোগ নেই। তবে তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চাইতে পারেন। অন্যদিকে, পিতার প্রাণ ভিক্ষায় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন কামারুজ্জামানের পুত্র ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামের সাংগঠনিক বর্তমান ক্ষমতা দেখতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরী হতে পারে যে কোনো সময়। এই ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকার এও প্রমাণ করতে চায়- সময়সাময়িক যে গুঞ্জন চলছে অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আপোষ- তা গুজব বলেও প্রমানিত হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, হাসিনা সরকার হঠাত করেই একের পর এক আদেশে একটু মনোযোগি হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য, নভেম্বর থেকে শুরু করে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি রায় কার্যকরী করা। এমন কি একদিনেও বেশ কয়েকটি রায় কার্যকর করার নতুন নজীরে যাওয়া হতে পারে।তবে জামায়াতের মনোভাব যাচাই করতে প্রথমেই সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার পথেই হাটছে সরকার- এমন তথ্য মিলছে।
কামরুজ্জামানের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে তাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।ইতোমধ্যে কামারুজ্জামান কে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষ থেকে সারা হয়েছে ফাঁসির মহড়া। নির্ধারণ করা কসাইকে দিয়ে এই মহড়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে কামারুজ্জামানের পুত্র বলছে, পিতার প্রাণ ভিক্ষায় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করা হতে পারে। এদিকে রায় কেন্দ্র করে যে কোন নাশকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঠেকাতে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।তিনি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে খুন, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের বেশ কয়েকটি অভিযোগ এর আগেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছর ওই আদালত তাঁর ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কামরুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার চূড়ান্ত রায় দিল। সেই রায়ে তাঁর ফাঁসির সাজাই বহাল রাখা হল। এর পর এই নেতার ফাঁসি শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এদিকে এই রায়ের বিরোধিতা করে বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গত সপ্তাহেই আরও এক শীর্ষ জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামির প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। তারই প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকে হরতাল চলছে দেশে। যদিও জনজীবনে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। তার মধ্যেই রবিবার জামায়াতে ইসলামীর আর এক বড় নেতা মির কাসেম আলিকেও প্রাণদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, কামরুজ্জামানের রায় বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ থানা, ওয়ার্ডের নেতা-কর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ওইদিন সকাল থেকেই নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নেবেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও সমবেত হবেন নেতা-কর্মীরা।
এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকারের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবির। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবার যাতে এ ধরনের কোনো ‘তাণ্ডব’ করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তিনি বলেন, দলের নেতারা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ডসহ নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। কেউ সহিংসতা কিংবা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইলে তারা তা প্রতিহত করবেন। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। রাজধানীতে নজরদারি বাড়ানোর পাশপাশি প্রস্তুত রাখা হবে অতিরিক্ত ফোর্সও।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সম্প্রতি খানিকটা কৌশলী ভুমিকায় রয়েছে বলে অনেকেই অভিমত দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্নজন নানা প্রমাণাদি তুলে ধরে এও বলছেন, লন্ডনে বসবাসরত জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে দেশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের প্রভাবশালীর সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে যে কোনো রায় মেনে নেয়ার মানসিকতায় দলটি রয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। সূত্র দাবী করছে, জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বেশ কিছু সংস্কার নিয়ে নতুন একটা ইসলামী দলের নেতৃত্বে জামায়াতের হাল ধরতে পারেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মতো বহির্বিশ্বে সমাদৃত ইসলামী নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে আরেকটি সূত্রের দাবী অনুযায়ী বলা হচ্ছে, জামায়াত রাজপথে নাশকতা করে আর এগুতে চায় না। দেশের এমন কিছু সংকট সৃষ্টিতে তাঁরা ভুমিকা রাখতে চায়- যেখানে সরকার এতটাই বিপদে পড়ে যায় ক্ষমতায় টিকে থাকাও দায় হয়ে যায়।