৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুরে ৪ উপজেলায় প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধের লড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ ২৭ ফেব্র“য়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীন বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল ২৬ ফেব্র“য়ারি সকাল থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ ভোট কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রগুলোর আশেপাশে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রেখেছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকা মোবাইল টিম। ২য় পর্যায়ে নির্বাচনী তফসিলে চাঁদপুর জেলার ৫ উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সীমানা জটিলতা কেন্দ্র করে হাইমচরে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। সে কারণে হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সকল নির্বাচনী সরঞ্জাম এবং প্রার্থীদের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সামান্য একটি সীমানা ইস্যুকে পূঁজি করে জনৈক প্রার্থীর নেতৃত্বে মহামান্য হাইকোর্টে রীট আবেদন করার পর তা স্থগিত রাখা হয়। যদিও ঐ রীটের উপর নির্বাচন কমিশন আপিল করলেও আইনি জটিলতার কারণে তা বহাল থাকে। এদিকে নির্বাচনের আগের দিন (গতকাল ২৬ ফেব্র“য়ারি) হঠাৎ করে হাইমচর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীদের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ভোটারদের প্রস্তুতি থাকা সত্তেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এ কারণে হাইমচরের সাধারণ ভোটারদের মন্তব্য ওই প্রার্থী নিশ্চিত পরাজিত হবেন জেনে এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। কবে নাগাদ এ নির্বাচন হবে তাও বলা যাচ্ছে না।
চাঁদপুরের ৪ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২শ’ ৩৫টি এবং অতিঝুঁকিপূর্ণ (চরাঞ্চলের) কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে ২২টি। এদিকে নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। তবে চরাঞ্চল এলাকার ভোট কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার দায়িত্ব পালন করবেন। এ নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এরা প্রত্যেকেই একেকটি মোবাইল টিমের নেতৃত্ব দেবেন। চাঁদপুরে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর ২শ’ ৬০ জন, বিজিবির ৩শ’ ৩০ জন, র্যাবের ১শ’ ১১ জন এবং পুলিশবাহিনীর ১ হাজার ৩শ’ ৩৯ জন সদস্য সর্বদা ভোট কেন্দ্রের আশেপাশে এবং নদী ও সড়ক পথে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
জানা যায়, চাঁদপুর জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮শ’ ১১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৩শ’ ৮৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪শ’ ২৬ জন। এ উপজেলায় সর্বমোট ভোট কেন্দ্র ১শ’ ২৩টি এবং বুথ ৭শ’ ৮৫টি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ৬২ হাজার ১শ’ ১৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ৫শ’ ৫৮ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৬১ জন। এ উপজেলায় সর্বমোট কেন্দ্র ১শ’ ৫টি এবং বুথ ৭শ’ ৮৫টি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪শ’ ৩৯ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৮ হাজার ২শ’ ১৪ এবং মহিলা ভোটার ৬৯ হাজার ২শ’ ২৫ জন। এ উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৫৪টি এবং বুথ ৩শ’ ৬২টি।
মতলব উত্তর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭শ’ ১১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৮ হাজার ৫শ’ ৭০ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ১শ’ ৪১ জন। এ উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ৮৫টি এবং বুথ ৫শ’ ৩৯টি।
অন্যদিকে আজকের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর শহরসহ নির্বাচনী উপজেলাগুলোতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুরের বসবাসকারী মানুষজনও ছুটে এসেছেন। বাংলাদেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সে কারণে ভোটারের সংখ্যা যতই হোকনা কেন প্রতিটি উপজেলায় ৯০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি তারা আশা করছে।
চাঁদপুরের সব দলের প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকায় জেলার সর্বত্রই ভোটারদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। বিশেস করে নতুন ভোটাররা মুখিয়ে আছেন প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন চাঁদপুরবাসী।
এ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ লড়াইয়ে সর্বশেষ কে হাসছেন বিজয়ের হাসি সেটিই এখন দেখার অপেক্ষায় ৪ উপজেলার জনগন।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪টি উপজেলায় যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হচ্ছেন ঃ চাঁদপুর সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ ইউসুফ গাজী (আনারস), বিএনপি সমর্থিত দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান (দোয়াত-কলম), জাতীয়পার্টি সমর্থিত অ্যাড. মহসিন খান (টেলিফোন) ও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত শেখ মোঃ জয়নাল আবেদীন (কাপ-পিরিচ), ফরিদগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন ঃ আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবু সায়েদ সরকার (হেলিকাপ্টার), বিএনপি সমর্থিত শরিফ মোঃ ইউনুস (দোয়াত-কলম), স্বতন্ত্র হাজী মোঃ মোজাম্মেল (টেলিফোন), স্বতন্ত্র অ্যাড. দুলাল মিয়া পাটোয়ারী (ঘোড়া), স্বতন্ত্র আব্দুল মালেক বুলবুল (আনারস), স্বতন্ত্র আলহাজ্ব এম এ হান্নান (চিংড়ি মাছ) ও বাসদ সমর্থিত হারুনুর অর রশিদ (মোটর সাইকেল)। মতলব উত্তর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন ঃ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু (আনারস), বিএনপি সমর্থিত নুরুল হক সরকার (দোয়াত-কলম) ও ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থী আমান উল্যাহ সরকার (কাপ-পিরিচ)। মতলব দক্ষিণ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত অধ্যাপক সিরাজুম মোস্তফা তালুকদার (দোয়াত-কলম) ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ শুক্কুর পাটওয়ারী (্আনারস)।
চাঁদপুর সদর উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী নাজমুল পাটওয়ারী (তালা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বেলায়েত হোসেন বিল্লাল (বই) ও এস এম জয়নাল আবেদিন (জাহাজ), বিএনপি সমর্থিত খলিলুর রহমান গাজী (চশমা), জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অ্যাড. মোঃ শাহাজাহান মিয়া (উড়োজাহাজ), ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থী মোঃ হানিফ গাজী (মাইক) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত শিপ্রা দাস (কলস) ও বিএনপি সমর্থিত অ্যাড. মনিরা চোধুরী (পদ্ম ফুল)।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পুরুষ পদে ওয়াহিদুর রহমান রানা (চশমা), স্বতন্ত্র মুকুল আহমেদ (তালা), বিএনপি সমর্থিত মোঃ মজিবুর রহমান দুলাল (টিয়া পাখি), বিএনপি সমর্থিত রেজাউল করিম (জাহাজ) ও জামাত সমর্থিত শরীফ মোঃ আঃ কুদ্দুস (বই) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত রেবেকা সুলতানা স্মৃতি (কলস), আওয়ামী লীগ সমর্থিত রিনা নাছরিন (ফুটবল), স্বতন্ত্র জোবেদা মজুমদার খুশি (পদ্মফুল) ও বিএনপি সমর্থিত ফাতেমা খানম (হাঁস)
মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ২জন। এরা হচ্ছেন ঃ আওয়ামী লীগ সমর্থিত আরিফুল ইসলাম ইমন (জাহাজ) ও বিএনপি সমর্থিত মোসলেন উদ্দিন খান (তালা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিলুফা সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী। এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শত্তকত আলী বাদল (জাহাজ), বিএনপি সমর্থিত শাহ্জাহান মল্লিক (তালা) ও জামাত সমর্থিত আঃ রশিদ পাটওয়ারী (চশমা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ৩জন এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত লক্ষ্মী রাণী দাস (হাঁস), বিএনপি সমর্থিত রেহেনা আক্তার রানু (ফুটবল) ও স্বতন্ত্র মাইরীন সুলতানা নয়ন (কলস)।
0 0 0 0