স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার। চাঁদপুর পৌর ঈদগাহে (পৌরপার্ক) বেলা ২টায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহামেদ মানিক। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন চাঁদপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম।
দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর পর চাঁদপুর সদর ও পৌর বিএনপির সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভোটাভুটির মাধ্যমে সদর ও পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চার জন নির্বাচিত হন।
এরা হচ্ছেন : সদর উপজেলার সভাপতি দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান গাজী এবং পৌর কমিটির সভাপতি অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম ও সাধারণ সম্পাাদক আক্তার হোসেন মাঝি। এঁদের নেতৃত্বে দীর্ঘ ছয় বছর সদর উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিএনপির কার্যক্রম চলে। এরই মধ্যে গত বছরের নভেম্বরে সদর ও পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে উভয় কমিটির সভাপতিদ্বয়কে দু্ই কমিটির আহ্বায়ক করে দুটি আহ্বায়ক কমিটি আনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। আর পূর্বের কার্যকরী কমিটির অন্যদেরকে আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এই আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনেই আজ সদর ও পৌর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে।
সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি নানা জল্পনা-কল্পনাও চলছে। নেতৃত্বে কারা আসছেন, কেমন নেতৃত্ব আসছে এটি নিয়েই চলছে নানা গুঞ্জন। দেওয়ান সফিক ও অ্যাডঃ সলিম উল্যাহর নেতৃত্বাধীন কমিটিতো দীর্ঘ ছয় বছর খুব ভালোভাবেই কার্যক্রম চালিয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁদের চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাঁদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো বিরোধ বা বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের নেতৃত্বে চাঁদপুর সদর ও পৌর এলাকায় বিএনপির শক্ত অবস্থান তৈরি হয়। এর ফল হিসেবে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বাগিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদটিতেও বিএনপির শরীক জামায়াত প্রার্থী জয়লাভ করে। তাই সদর ও পৌর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে সফল হিসেবে দেখছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এখন আজকের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কি পূর্বের নেতৃত্বই বহাল থাকছে না কি পুরানোদের মধ্য থেকেই পদ পরিবর্তন হয়ে নূতন নেতৃত্ব আসছে তা নিয়েই নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও হিসেব-নিকেশ। আর জেলা নেতৃত্বও জটিল হিসেব-নিকেশের মধ্যে রয়েছে। কারণ, যোগ্য প্রার্থী অনেকেই রয়েছেন। তবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ ক’জন নেতার সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেলো, পৌর বিএনপির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে এটা অনেকটা নিশ্চিত। তার কারণ হচ্ছে, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্যাহ সেলিম আর পৌর কমিটিতে থাকছেন না-এটা তিনি পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। নূতন নেতৃত্বকে সুযোগ করে দিতেই তাঁর এ সিদ্ধান্ত। এমতাবস্থায় পৌর বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন মাঝি। তিনি এখনো পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই আছেন। তাছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে তাঁর একটি সুনাম রয়েছে। আক্তার হোসেন মাঝি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখন পর্যন্ত কারো নাম শোনা যায়নি নেতা-কর্মীদের মুখে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক জনের নাম শোনা যায়। এর মধ্যে জোরালো আলোচনায় আছেন অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ ও অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান। এ দুজনের মধ্য থেকেই পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
সদর উপজেলা কমিটি গঠন নিয়েই জেলা বিএনপি জটিল অবস্থায় আছে। দেওয়ান সফিকুজ্জামানও আর সদর কমিটিতে আছেন না এমন আভাস দিলেও নেতা-কর্মীরা তাঁর প্রতি অত্যন্ত আস্থাভাজন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে তাঁর রয়েছে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এ জন্য দলের নেতা-কর্মীরা চাচ্ছেন সভাপতি পদে দেওয়ান সফিকই থাকুক। এ দিকে দেওয়ান সফিক হয়ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারেন, সে জন্যে হয়ত তিনি আর সদর উপজেলা কমিটিতে থাকতে চাচ্ছেন না। তবে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ চাচ্ছেন দেওয়ান সফিককে সভাপতি রেখে সদর উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন করতে। এ ক্ষেত্রে হয়তো সাধারণ সম্পাদক পদে নূতন মুখ আসতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত যদি দেওয়ান সফিক সদর কমিটিতে না-ই থাকেন তখন সভাপতি হসেবে জোরালো আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ শামছুল ইসলাম মন্টু ও খলিলুর রহমান গাজী। সাধারণ সম্পাদক পদে শাহজালাল মিশন ও আফজাল হোসেন আলোচনায় আছেন। আবার নেতা-কার্মীদের থেকে এমনও আভাস পাওয়া গেছে, অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর খান ও আফজাল হোসেনকে যদি কোনো কমিটির মুখ্য দায়িত্বে আনা হয় তাহলে শাহজালাল মিশন অবমূল্যায়িত হবে। তখন হয়ত শাহজালাল মিশনকে কোনো কমিটির মুখ্য দায়িত্বে আনা হতে পারে। অপর দিকে আবার এও শোনা যাচ্ছে, যদি মিশন, আফজাল ও জাহাঙ্গীর বিএনপির বৃহৎ দুটি অঙ্গ সংগঠনের মূল নেতৃত্বে আছেন। সেখান থেকে তাদেরকে বিএনপিতে নিয়ে আসলে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এ বিষয়টিও জেলা নেতৃত্ব সক্রিয়ভাবে মাথায় রাখছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো সদর কমিটি পূর্বেরটা বহাল থাকবে অথবা শুধু সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে। আর পৌর কমিটির সভাপতি হিসেবে আক্তার হোসেন মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ এমন ঘোষণাও আসতে পারে।
এদিকে উভয় কমিটি কি কাউন্সিলরদের ভোটাভুটির মাধ্যমে হবে, না কি সিলেকশানের মাধ্যমে হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান জানান, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই রয়েছে। আমাদের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহামেদ মানিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে যে পদ্ধতিতে এগুবেন সেটাতেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।